বাইক্কাবিলে ৩৮ প্রজাতির পাখি মিলছে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হাইল হাওরের সংরক্ষিত মাছের অভয়ারণ্য বাইক্কা বিলে এবারের শীত মৌসুমে আসা ৩৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মিলেছে। ৫ হাজার ৪ শত ১৮টি পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে পাতি তিলিহাঁস। এদের সংখ্যা এক হাজার পাঁচ শত ৮০টি। গত ২৪ থেকে ২৮শে জানুয়ারি এ তিন দিনব্যাপী বাইক্কা বিলে অনুষ্ঠিত জলচর পাখি শুমারিতে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। তবে আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে এসব অথিতি পাখির আগমন। প্রতি বছরই শীত প্রদান অঞ্চল থেকে উষ্ণতার খোঁজে ঝাঁকে ঝাঁকে আসে পরিযায়ি পাখির দল। শীতের তীব্র কুয়াশার চাদর গায়ে জড়ানো এসব পাখি মেতে ওঠে জলকেলিতে আর ছন্দময় ডানা ঝাঁপটানোয়। হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে বিচিত্র রং আর নানা প্রজাতির এসব পাখি আসতে শুরু করে নভেম্বরের শুরুতে। আপন নীড়ে ফেরে গ্রীষ্মের শুরুতে। তবে প্রতি বছরই কিছু পাখি দেশিয় পাখিদের সাথে সখ্যতা গড়ে থেকে যায় এ বিলেই। আবার গাছে গাছেও মেলা বসে এসব পাখির। তখন কলতানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাস জুড়ে উপজেলার হাইল হাওরের বাইক্কবিলের মাছের এই অভয়াশ্রমে কেবলই পাখির আনাগোনা-কলতান আর পানিতে ডানা ঝাঁপটানোর পাখির শব্দে থাকে মূখর। এসময় এঅঞ্চলে বেড়াতে আসা পাখিপ্রেমী দর্শকরা মুগ্ধ হয় পাখি দেখে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুদূর সাইবেরিয়া ও হিমালয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শীতের শুরুতে প্রতিবছর ঝাঁকে ঝাঁকে আসে নানা প্রজাতির পাখি। তাদের নিজেদের অস্থিত্বের প্রয়োজনে এ দেশের আতিথ্য নিতে ছুটে আসে এসব পরিযায়ী পাখিরা। এবার আসা অতিথি পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজসরালি, লেঞ্জা হাঁস, সাদা বক,
কাস্তে চড়া, বালি হাঁস, পাতি তিলি সরালি হাঁস, পানকৌড়িসহ আরো অনেক প্রজাতির পাখি। হাইল হাওরে স্থানীয় ক্রেল প্রজেক্টের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ক্রেলের প্রজেক্টের সহযোগিতায় গত ২৪-২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পক্ষ থেকে তিনদিনব্যাপী বাইক্কা বিলে একটি বার্ড সার্ভে করা হয়। এতে প্রায় ৫ হাজারের উপরে পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে জানুয়ারিতে পাখি শুমারিতে বাইক্কা বিলে ৪১ প্রজাতির ১০ হাজার ৭শ’ ১৩টি পাখি পাওয়া গিয়েছিলো। এর আগে ২০১৬ সালে পাওয়া গিয়েছিলো ৩১ প্রজাতির ৮ হাজার ৮শ’ ৩১টি পাখি। তবে এবার পাখি শুমারিতে গত বছরের তুলনায় কম পাখির দেখা পাওয়া গেছে। পাখির সংখ্যা হ্রাসের কারণ বিষয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, গত বছর সব বিলেই তার আগের বছরের চেয়ে বেশি পাখি পাওয়া গিয়েছিলো। এ বছর হাওরগুলোতে গত বছরের চেয়ে কমসংখ্যক পাখি আসে। প্রতিবছরই পাখির সংখ্যা উঠা-নামা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ বছর জানুয়ারির শেষে বাইক্কা বিলে গিয়ে ‘পাতি তিলিহাঁস’ বেশি পেয়েছি। ফেব্রুয়ারিতে পাখি শুমারি করলে হয়তো অন্য একটি প্রজাতির হাঁস বেশি পাওয়া যেতো। পাতি-তিলিহাঁসগুলোকে জানুয়ারিতে যেভাবে বেশি সংখ্যায় দেখা যায়, তেমন ফেব্রুয়ারিতে দেখা যায় না। পানি কমলে-বাড়লে একেক হাঁসের সুবিধে হয়, আবার একেক হাঁসের অসুবিধেও হয়। সে অনুযায়ী ওরা অবস্থান করে কিংবা অন্যত্র সরে যায়। শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ ও শিকার বন্ধে প্রশাসন বরাবরই তৎপর রয়েছে। এছাড়া অতিথি পাখিদের যাতে শিকারীরা শিকার করতে না পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা স্থানীয় প্রশাসনকে দেয়া আছে বলে জানালেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

No comments

Powered by Blogger.