নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অব্যাহত আলোচনার তাগিদ বাংলাদেশের

নিরাপত্তা পরিষদের কার্যতালিকায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা অব্যাহত রাখার তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আশা করে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদ অব্যাহত ভূমিকা পালন করবে। গতকাল নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক সভায় এ মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু সদস্য রাষ্ট্রের অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদে কুয়েতের সভাপতিত্বে মিয়ানমারের ওপর এ বছরের প্রথম উন্মুক্ত সভা গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত হয়। আজ ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে জাতিসংঘের পক্ষে শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এবং ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা বক্তব্য রাখেন। সভায় রাষ্ট্রদূত মাসুদ রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উদ্বৃত করে তিনি বলেন, এই সংকটের শিকড় মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও মিয়ানমারে নিহিত। তিনি দুস্থ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার বিষয়টি স্মরণ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত শিগগিরই নিয়োগ করা হবে এবং তার মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত হবে। আজকের সভায় নিরাপত্তা পরিষদের পনেরো সদস্য রাষ্ট্রের সবাই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
তারা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারে প্রয়োজনীয় সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে মিয়ানমারকে সহযোগিতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান। পরিষদের কিছু সদস্য কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়াসহ অন্যান্য অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। উত্তর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা গ্রামসমূহে গণকবর উদ্ধার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরির খবরে নিরাপত্তা পরিষদের বেশ কিছু সদস্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও দুর্গত রোহিঙ্গাদের কাছে নির্বিঘ্নে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য তারা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। পরিষদের কয়েকটি সদস্য দেশ মিয়ানমারে দুজন রয়টার্স সাংবাদিকের আটকাদেশ ও হয়রানি বন্ধের জন্য জোরালো আহ্বান জানান। কয়েকটি সদস্য দেশ আগামী মাসগুলোতে তাদের নিজ নিজ সভাপতিত্বকালে মিয়ানমার পরিস্থিতিবিষয়ক আলোচনা পরিষদের কার্যতালিকায় রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

No comments

Powered by Blogger.