পদ্মা সেতুর বরাদ্দ কমছে ৮২১ কোটি টাকা

কাঙ্ক্ষিত ব্যয় করতে না পারায় ৮২১ কোটি টাকা বরাদ্দ কমছে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা পদ্মা সেতু প্রকল্পে। অন্যদিকে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজে। এছাড়া অপর দুই আলোচিত প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মেট্রোরেল প্রকল্পের বরাদ্দ অপরিবর্তিতই থাকছে। চলতি বছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) অর্থ বরাদ্দের এ প্রাক্কলন নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের তালিকাভুক্ত এসব প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে বরাদ্দ কম বা বেশি করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এখন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পভিত্তিক যেসব বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে তা আমরা সংযোজন-বিয়োজনের কাজ করছি। আগামী ৬ মার্চের মধ্যেই আশা করছি এডিপি সংশোধন করা সম্ভব হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সময় পাওয়ার পরই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’ সূত্র জানায়, ইতিমধ্যেই চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাটছাঁটের প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। বৈদেশিক সহায়তা অংশে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা কমিয়ে ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চূড়ান্ত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এদিকে অর্থমন্ত্রণালয় থেকেও পরিকল্পনা কমিশনকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থ বরাদ্দ কমবে না। এখন পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পভিত্তিক বরাদ্দের কাজটি চূড়ান্ত করছে। সূত্র জানায়, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য চলতি অর্থবছরের এডিপিতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছিল। প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৫২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ বরাদ্দের বিপরীতে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের ছয় মাসে ব্যয় হয়েছে ৬২৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। এছাড়া শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এ প্রেক্ষাপটে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমছে ৮২১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ফলে সংশোধিত বরাদ্দ দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ৭০৩ কোটি ১৭ লাখ টাকায়। এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, সামান্য কিছু বরাদ্দ কমাতে হচ্ছে। এটা বাস্তবতা। কেননা পাইলিংয়ের জন্য নতুন ডিজাইন করাসহ বিভিন্ন কারণেই এ টাকাটা ব্যয় করা যাবে না। তবে এজন্য প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা বা কাজ বাধাগ্রস্ত হবে না। ফার্স্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল পদ্মা সেতু কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ শতাংশ। এছাড়া পদ্মা নদী শাসন কাজ হয়েছে ৩৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। জাজিরা প্রান্তে অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ৯৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মাওয়া প্রান্তে অ্যাপ্রোচ সড়কের শত ভাগ, সার্ভিস এরিয়া-২ এর কাজ শত ভাগ। প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে বিপরীত চিত্র বিরাজ করছে সরকারের অপর মেগা প্রকল্প মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে। প্রকল্পটির অনুকূলে মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। সেখান থেকে ২৮০ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৫০০ কোটি টাকা এবং জাইকার ঋণ ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, এ বরাদ্দ এখনও চূড়ান্ত বলা যায় না। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এটি চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। রাজধানীবাসীর স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেল। এ প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে দ্রুত। তাই সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমছে না। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৭২৫ কোটি ৮৩ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পে বরাদ্দ অপরিবর্তিতই থাকছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৮৮১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-১ (মাটির নিচের বিভিন্ন কাজ) এর অগ্রগতি হয়েছে ৫৫ শতাংশ। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-২ (অবকাঠামো নির্মাণের) এর কাজ চলছে। এছাড়া দেশের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ। প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুরু থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পে বরাদ্দ কমবে না। এছাড়া প্রকল্প পরিচালক শৌকত আকবর মঙ্গলবার যুগান্তরকে জানান, রাশিয়ার অর্থবছর শুরু হয় জানুয়ারিতে আর শেষ হয় ডিসেম্বরে। তাই এ প্রকল্পের জন্য অর্থছাড়ও করে সে অনুযায়ীই। আর বাংলাদেশে অর্থবছর শুরু হয় জুলাইতে, শেষ হয় জুনে। এই জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে বলা না গেলেও কাজের অগ্রগতি বিবেচনায় বলতে পারি বরাদ্দ অপরিবর্তিতই থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.