যেভাবে জীবিত হবে মৃত মানুষ!

‘জীবন এত ছোট কেনে?’ এ কেবল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ উপন্যাসের সংলাপমাত্র নয়। মানবজীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপই যেন এই একটি বাক্যে নিহিত রয়েছে। সেই চিরকালীন আক্ষেপ হয়তো এবার মিটতে চলল। তেমনটাই ইঙ্গিত মিলছে একদল সুইডিশ বিজ্ঞানীর গবেষণা থেকে। তারা চেষ্টা করছেন মৃত ব্যক্তিদের ডিজিটাল কপি তৈরি করার! এআই অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রয়োগ করে তারা আবার মৃতদের ফিরিয়ে আনতে চান রক্তমাংসের পৃথিবীতে। খবর এবেলাডটইনের। সুইডিশ অন্ত্যেষ্টি এজেন্সি ফিনিক্স এই গবেষণার জন্য মৃতদেহ চাইছে ইন্দোনেশিয়ার টোরাজন জনজাতির কাছ থেকে। প্রসঙ্গত, ইন্দোনেশিয়ার এই বিশেষ জনজাতি মৃতদেহকে কবর দেয় না বা দাহ করে না। রেখে দেয় নিজেদের কাছেই! মৃত প্রিয়জনদের একটি বিশেষ ঘরে রেখে দেওয়া হয়। প্রত্যেক দিন সেই মৃত মানুষের গোসল করে জামাকাপড় বদলে দেয়া হয়। দেয়া হয় খাবারদাবার। একটি বড় বাটিও রাখা হয় ঘরের কোণে। এই বাটি রাখার উদ্দেশ্য, যেন মৃত ব্যক্তিরা ওই বাটিতে শৌচকর্ম করবেন! মৃতদের শরীরে ফরমালিন প্রয়োগ করে তাদের শারীরিক পচন রোধ করা হয়। এভাবে বছরের পর বছর ধরে মৃত মানুষের দিনরাত কাটে জীবিতদের সঙ্গেই।
সেই সংরক্ষিত মৃতদেহকেই ‘জীবিত’ করতে চান বিজ্ঞানীরা। তারা মৃত মানুষের রোবটিক ক্লোন তৈরি করতে চান। ক্লোন মানে একেবারে তাদের অবিকল সমদর্শী। শুধু চেহারার মিল নয়, এরা কথাও বলবে। তবে খুব জটিল কোনও প্রশ্ন নয়, দৈনিক জীবন বা আবহাওয়া-সংক্রান্ত প্রশ্ন— এই ধরনের বিষয়ে তারা কথা বলতে পারবে। সত্যিই কি সম্ভব এমন ক্লোন বানানো? বিশ্বখ্যাত গবেষক মিচিও কাকু জানান, এমনটা অবশ্যই সম্ভব, যদি সেই মৃত ব্যক্তির সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য কোনো কম্পিউটারে জমা করে রাখা যায়। তাহলেই সম্ভব সেই মানুষটিকে অমর করে রাখা! প্রসঙ্গত, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে মৃত ব্যক্তির ক্লোন বানানোর প্রক্রিয়ায় কোথায় যেন উঠে আসছেন স্টিফেন হকিংও। ৭৬ বছরের বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী বারবার সতর্ক করেছেন এই বিষয়টি সম্পর্কে সাবধানে থাকতে। অন্যথায় এআই হয়ে উঠতে পারে সভ্যতার সব থেকে বড় শত্রু! টেসলার চিফ এক্সিকিউটিভ মাস্কও একই কথা বলেছেন এর আগে। যদিও সম্প্রতি তার কোম্পানিও তৈরি করছে ‘নিউরাল লেস’ টেকনোলজি। যা কিনা মস্তিষ্কের ভাবনাকে ধরে রাখতে সক্ষম! সে প্রসঙ্গে মাস্ক অবশ্য বলেছেন, এআই-কে এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এর সাহায্যেই সভ্যতার তুমুল অগ্রগতি ঘটানো সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.