দরকার নতুন ধরনের শিক্ষা বোর্ড by মাসুম বিল্লাহ

পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, নকল করা এবং নকল করতে না দিলে শিক্ষকদের প্রহার ইত্যাদি ব্যাপার মামুলি ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নীতিনৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ছুটছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পেছনে। কী হবে এই পাস দিয়ে, এই সার্টিফিকেট দিয়ে। এ পর্যন্ত এসএসসির প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে আর ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দিয়েই পরীক্ষা হচ্ছে। ১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে অভিন্ন প্রশ্নপ্রত্রে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। এবার ২০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের দিন ৮৯ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয় এবং অনুপস্থিত ছিল ১০ হাজার ১০ জন পরীক্ষার্থী। এটিও এক ধরনের হতাশার চিত্র। এসএসসির প্রথম পরীক্ষার ‘বাংলা প্রথম পত্র’ প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার পর দিনের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শুরুর পৌনে এক ঘণ্টা আগে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর এসেছে। একটি গ্রুপ প্রশ্নপত্র আপলোড করে অন্য অনেক গ্রুপ ও পেজে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার ‘খ’ সেটের প্রশ্নপত্র ফেসবুকে পাওয়া যায়, যা প্রশ্নপত্রের সাথে হুবহু মিলে। শুধু বাংলা বা ইংরেজি নয়, প্রত্যেক বিষয়ের প্রশ্নই বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। বন্ধ করা যাচ্ছে না প্রশ্নপত্র ফাঁস, কী হবে এই পাস দিয়ে। একের পর এক প্রশ্নফাঁসের কবলে পড়ে রীতিমতো অসহায় বোধ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, তারা এক নাগাড়ে দুই মাস প্রশ্নের নিরাপত্তা দিতে পেরেছেন। কিন্তু পরীক্ষার দিন সকালে তা ফাঁস হচ্ছে। সবাই মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করছেন। তবে এটি ঠেকাতে বিটিআরসি ও পুলিশের দায় নিয়ে কেউ কিছু বলছে না। এখন এই পরীক্ষায় পাস করে আসা শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কোনো চাকরিদাতা সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। দেশের সাধারণ মানুষেরও আস্থা নেই। তাহলে এই পরীক্ষা নিয়ে কার কী লাভ হচ্ছে? শুধু রুটিন রক্ষা করা? অথচ অনেক মেধাবী তরুণ রয়েছে যাদের এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে সম্পর্ক নেই। তাদের মূল্যায়ন দেশও করতে পারল না। ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রশ্নফাঁসের কারণে এসব পরীক্ষার ওপর কারো কোনো আস্থা থাকছে না। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা থেকে পরীক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে শিক্ষামন্ত্রী নিজেই বলছেন- এখানে দুর্নীতি রয়েছে, তাহলে আমরা কার ওপর নির্ভর করব? দুর্নীতিবাজরা পার পেয়ে যাচ্ছে। প্রশ্নফাঁসের ক্ষেত্রে তারা একের পর এক কৌশল পাল্টাচ্ছে। পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দেয়া আর শ্রেণিকক্ষে বিনা পড়াশুনায় পরীক্ষা দেয়া, এসবই সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান শেরপুর জেলার একটি গ্রামে নতুন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় উদ্বোধন করে নালিতাবাড়ী ফিরছিলেন, হঠাৎ রাস্তার পাশে কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দেখে মন্ত্রীর গাড়িবহর থেমে যায়। মন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে সোজা চলে যান চতুর্থ শ্রেণীর কক্ষে। সেখানে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে ইংরেজিতে ‘ফোর’ বানান লিখতে বলেন। কেউই এটা না পারায় তাদের ‘ফোর’ বানান বলতে বলেন, কিন্তু কেউই ফোর বানান বলতে পারেনি। তখন তিনি প্রধান শিক্ষককে ওই শ্রেণিকক্ষে ডেকে ক্লাসের ফার্স্ট ও সেকেন্ড বয় কে কে?
জিজ্ঞেস করেন। প্রধান শিক্ষক বললেন তারা দু’জনের কেউই উপস্থিত নেই। আমরা কেমন আকর্ষণীয় ক্লাসরুম তৈরি করেছি যে, ক্লাসে প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া শিক্ষার্থীই ক্লাসে আসে না! মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে শ্রেণিশিক্ষকের কাছে জানতে চান, তার বেতন কত। তিনি বললেন ২৬ হাজার টাকা। মন্ত্রী তখন বললেন, বেতন বাড়ানো হয়েছে কিন্তু আপনারা শেখাচ্ছেন কী শিক্ষার্থীদের। এরপর মন্ত্রী তৃতীয় শ্রেণীতে ঢোকেন। সেখানে একজন ছাত্র ‘থ্রি’ বানান লিখতে পেরেছে। তার কাছে মন্ত্রী জানতে চাইলেন, তাকে বাসায় কে পড়ায়। ছেলেটি বলল, তার বাবা। তখন মন্ত্রী বললেন, ছেলেটি বাসায় পড়ে, নিজেও মেধাবী; কিন্তু বিদ্যালয়ে সে কী শিখছে। একই ক্লাসের অন্তত ১৫ জনকে মন্ত্রী থ্রি ও টু-এর বানান লিখতে বলেন কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীই তা পারেনি। মন্ত্রী তখন হতাশার সুরে বললেন, আমরা মানসম্মত শিক্ষার কথা বললে কী হবে, মাঠপর্যায়ের চিত্র আসলে খুবই করুণ। এই অবস্থা দেখে আমি খুবই মর্মাহত। এটিই আসলে দেশের বাস্তব চিত্র। একজন মন্ত্রী সরাসরি যখন এই অবস্থা দেখতে পেরেছেন সেজন্য তাকে অনেক ধন্যবাদ। আমাদের শিক্ষার অবস্থা কিন্তু এটাই। শিক্ষা নিয়ে যারা কাজ করি তাই তারা অস্বস্তিতে ভুগি শিক্ষার এই অবস্থা দেখে। আমরা অহরহ ক্লাসরুম ভিজিট করি এবং এই করুণ চিত্র তুলে ধরি। তা কখনো কোথাও গুরুত্ব পায় না, পাওয়ার কথাও নয়। আগামী বছর পিইসি পরীক্ষায় দেখা যাবে এসব শিক্ষার্থী সবাই পাস করেছে ভালো গ্রেড নিয়ে, কেউ কেউ জিপিএ ৫ও পাবে, আর আমরা দেশজুড়ে তৃপ্তির ঢেঁকুরও তুলব। তাই মনে হয়, আমাদের শিক্ষামন্ত্রী যদি একবার স্কুল ও কলেজগুলোর বাস্তবচিত্র এভাবে দেখতেন, তাহলে বুঝতে পারতেন কী জাদু আছে আমাদের পরীক্ষায়, যে পাসের হার শতভাগ ছুঁই ছুঁই করে। এই জাদু তো পুরো জাতিকে পঙ্গু করার নামান্তর! এই শিক্ষার্থীদের কি মেধা নেই? অবশ্যই আছে। দেখা যাবে পড়াশোনা বাদ দিয়ে যখন ছোটখাটো কোনো ব্যবসায় করবে কিংবা অন্যকোনো কাজ করবে সেখানে ঠিকই মেধার স্বাক্ষর রাখবে। অথচ তাদের মেধার পরিস্ফুটনের দায়িত্ব ছিল শিক্ষকদের, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ও জাতির।
যা আমরা কেউই করতে পারিনি। কে নেবে এর দায়? এই ব্যবস্থাপনার সাথে যারা সরাসরি জড়িত, তারা কেউই কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না। পুরো মূল্যায়ন পদ্ধতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। মূল্যায়নের জন্য অনেক দেশের মতো সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে পুরো বেসরকারিপর্যায়ে বোর্ড গঠন করতে হবে। মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞরা সেটি করবেন। পাবলিক পরীক্ষার স্কোর হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। যেমন ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার স্কোর নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন থাকে না। IELTS, TOEFL, GRE ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষার মাধ্যমে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিইচ্ছুদের দক্ষতা পরীক্ষা করা হয়। এসব টেস্টে পরীক্ষার্থীরা যে স্কোর অর্জন করেন তার ওপর ভিত্তি করেই তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, আলাদা ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় না। আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতিও এভাবে করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা নাকি বছরে ছয়টি বোনাস পান, তারপরও কোনো কাগজপত্র নিতে গেলে ঘুষ ছাড়া নেয়া যায় না। অহেতুক সময়ক্ষেপণ ও হয়রানি তো আছেই। এই দুর্নীতির আখড়াগুলো শুধু বদনামই কুড়াচ্ছে, নতুন কিছু করার সামর্থ্য দেখাতে পারছে না। কাজেই আন্তর্জাতিক মানের মূল্যায়ন পদ্ধতির জন্য আমাদের এখনই চিন্তা শুরু করতে হবে। যারা সত্যিকারার্থে প্রফেশনাল একমাত্র তাদেরই উচিত মূল্যায়নের কাজ করা। ঢালাওভাবে সবাই এর সাথে যুক্ত থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। যেকোনো শিক্ষকের ইচ্ছে করলেই পরীক্ষক হতে পারার এবং এর সাথে রাজনীতিতে জড়ানোর অধিকার একেবারেই বন্ধ করতে হবে। প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়ে, নকল করে পাস করে, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে হকি স্টিক আর পিস্তল নিয়ে ছোটাছুটি করে জাতীয়পর্যায়ে এসব শিক্ষার্থীরাই যখন বড় বড় দায়িত্ব পালন করবে, তারা কী করবে? আমরা দলগত সুবিধার জন্য যদি এই বিষয়গুলোকে আশকারা দেই, তাহলে তার ফল যে পুরো জাতির ভবিষ্যৎ চরম অন্ধকারের দিকে ছুটবে তা বলা বাহুল্য। কিন্তু এসব দেখার কি কেউ নেই? অন্য দেশে বোর্ডের পরীক্ষা কর্মকর্তারাই পরীক্ষা গ্রহণ করেন, শিক্ষকদের সেখানে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এসব ক্ষেত্রে একটি স্কুল একাধিক বোর্ডের অধীনে বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারে। অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠানের যে বোর্ডকে ভালো লাগে, তারা সেই বোর্ডের অধীনেই পরীক্ষায় অংশ নেয়।
এতে বোর্ডগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকে এবং প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ থাকে না। আমাদের দেশেও অন্তত দু’টি বা তিনটি বোর্ড থাকতে পারে এ ধরনের। বিভাগে শিক্ষা বোর্ড গঠন করে শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি বাড়িয়ে আর সরকারি কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ আয়ের সুযোগ করে দেয়ার কোনো মানে হয় না। শিক্ষার মান যেখানে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তখনো আমরা বিনামূল্যে বই আর প্রায় শতভাগ পাস নিয়ে ব্যস্ত। আমরা ব্রিটেনের পরীক্ষা পদ্ধতির দিকে তাকালে দেখতে পাই, সেখানে বেশ কয়েকটি শিক্ষা বোর্ড জিসিএসই বা ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। একটি বিদ্যালয়কে তাদের পছন্দমাফিক বিষয়ভিত্তিক বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। পরীক্ষা পদ্ধতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শিক্ষকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে না। নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে থাকেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, সমাধান, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, রিভিউ, প্রুফ এবং প্রিন্টিংসহ সব কাজ বোর্ডের নির্ধারিত বিভাগের কর্মকর্তারা করে থাকেন। প্রশ্ন তৈরির জন্য বোর্ড ওই কর্মকর্তাদের স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়। আমাদের দেশে বোর্ড পরীক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধানিষেধ নেই। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকলে যেকোনো শিক্ষক বোর্ড পরীক্ষার পরীক্ষক হতে পারেন, এমনকি টাকার বিনিময়েও বোর্ড পরীক্ষক হওয়া যায়। একজন অনভিজ্ঞ শিক্ষক জীবনে প্রথমবারের মতো উত্তরপত্র মূল্যায়ন করছেন; কী করছেন তিনি। একটি শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। এই অবস্থা আমরা আর কতদিন চলতে দিব? ব্রিটেনের বোর্ডগুলোর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মার্ক স্কিম তৈরি করতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লেগে যায়। প্রতিটি বোর্ডের নিজস্ব ছাপাখানা আছে। পরীক্ষার আগের দিন কর্তৃপক্ষ প্রতিটি বিদ্যালয়ের এক্সামিন অফিসারের কাছে প্রশ্ন পাঠিয়ে দেয়। তিনি পরীক্ষা শুরুর আগে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা পরিদর্শনকর্মীদের সামনে প্রশ্ন খোলেন ও বিতরণ করেন। পরিদর্শনকারীদের বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। তারা উত্তরপত্র সংগ্রহ করে আবার তা এক্সামিন অফিসারকে বুঝিয়ে দেন। তিনি পরীক্ষার খাতা স্ব স্ব বোর্ডে পাঠিয়ে দেন। নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হলেও শিক্ষকেরা কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকেন না। বোর্ড কর্তৃপক্ষ উত্তরপত্র পাওয়ার পর পরীক্ষকদের কাছে মার্ক স্কিমসহ তা পাঠিয়ে দেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের বিভিন্নপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষক হিসেবে নির্বাচন করা হয় আর আমাদের বোর্ডের পরীক্ষক হতে পারেন একেবারে অনভিজ্ঞ শিক্ষকও। ওই একজন পরীক্ষক যে নম্বরই দেন না কেন, তা রিএক্সামিন করার আর সুযোগ নেই। এটা পরীক্ষা না প্রহসন! আমাদের দেশে যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয় তাতে চারটি ধাপে প্রশ্নফাঁসের সুযোগ রয়েছে।
প্রথম ধাপ- যারা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং মডারেশন করেন। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছেন যারা প্রশ্নপত্র কম্পোজ করেন। কিংবা প্রুফ রিডিং, প্রিন্টিং ও প্যাকেজিংয়ের সাথে জড়িত। তৃতীয় ধাপে ট্রেজারি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেখানে প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ করা হয়। চতুর্থ ধাপটি হচ্ছে- শিক্ষক-কর্মচারীরা। ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র বুঝে নেয়ার পর পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত মোবাইল বা গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তুলে প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়া হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি পদ্ধতিগত এবং ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত সমস্যা। এ কাজটি এককভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। সামগ্রিক পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় নিয়ে দলীয়ভাবে এই কাজ করতে হবে। তবে সবার ওপরে রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকতে হবে। বিগত পরীক্ষাগুলোর মতো এবারো পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগ মুহূর্তে ফেসবুকের কয়েকটি আইডি থেকে যোগাযোগের সূত্র দিয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে মূল প্রশ্নপত্র আর ফেসবুকে পাওয়া বহু নির্বাচনী প্রশ্ন হুবহু এক। তবে রচনামূলক মেলেনি। ফাঁসকারীরা ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করেছিল এক একটি প্রশ্নের জন্য। ‘খ’ সেটের ৩০টি প্রশ্ন হুবহু মিলে গেছে। ফেসবুকে পোস্ট দেয়া এক নম্বর প্রশ্ন ছিল প্রাচীন ভারতবর্ষে রচিত মহাকাব্য কোনটি? আর ৩০ নম্বরের প্রশ্নটি ছিল ’কপোতাক্ষ নদ’ কবিতায় প্রজা বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে। এই দু’টি এবং মাঝের ২৮টি প্রশ্নই হুবহু মিলে গেছে। আমরা দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ করে দ্রুত ফল দেয়ার চেষ্টা করি। এটা নিছক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষা নেয়া, প্রকৃত মূল্যায়ন থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে আমাদের এই পরীক্ষাব্যবস্থাপনা। বেসরকারিপর্যায়ে পরীক্ষা বোর্ড গঠন করে অচিরেই আন্তর্জাতিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। নতুবা জাতি মেধার দিক দিয়ে পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হবে।
লেখক : ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচিতে কর্মরত সাবেক ক্যাডেট কলেজ ও রাজউক কলেজশিক্ষক
ই মেইল : masumbillah65@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.