আমানত ও ঋণ অনুপাত সীমায় ছাড় চান ব্যাংক উদ্যোক্তারা

ব্যাংক খাতের অস্থিরতা কাটাতে আগের আমানত ও ঋণের অনুপাত সীমা (এডিআর) বহাল চান ব্যাংকের উদ্যোক্তারা। নতুন অনুপাত সীমার কারণে বিনিয়োগ কমে যাবে-এমন যুক্তি দেখিয়ে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতারা সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে চিঠি দিয়েছেন। জানা গেছে, সরকারের উচ্চপর্যায়েও দেখা করে বিষয়টি অবহিত করেছেন বিএবির নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে হঠাৎ করে বেসরকারি ব্যাংক থেকে তহবিল প্রত্যাহার না করে, সে জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিএবি নতুন করে যেসব দাবি তুলেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো, এডিআর আগের অবস্থায় ফেরানো, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধি, আবাসন খাতের ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখার বিধান পুরোপুরি তুলে দেওয়া এবং এডিআর সীমা থেকে কৃষি ঋণকে বাদ দেওয়া। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তহবিল প্রত্যাহার বিষয়েও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বিএবির নেতারা। এর আগে একই বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। অগ্রণী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে গভর্নর বলেছিলেন, ‘একটি বেসরকারি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছে। এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত সরিয়ে নিতে চাইছে। একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এই আতঙ্ক আগে শেয়ারবাজারে ছিল, এখন ব্যাংকে চলে আসছে।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যে নতুন এডিআর সমন্বয়ের সময় জুন থেকে বাড়িয়ে ডিসেম্বরে নির্ধারণ করেছে। পাশাপাশি আবাসন ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি ২ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ করেছে। বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে হঠাৎ করে টাকা তুলে না নেয়, এ জন্য পদক্ষেপ চেয়েছি।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, নতুন আমানত ও ঋণসীমার ফলে বাজারে তারল্যসংকট দেখা দিয়েছে। আমানত কমে যাওয়ায় উচ্চমূল্যে তা সংগ্রহে ব্যাংকগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে। এতে আমানতের সুদহার বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চমূল্যে আমানত সংগ্রহের কারণে ঋণের সুদহারও বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে ব্যাংকগুলো। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে দ্রব্যমূল্যও বেড়ে যাবে। সুদহার বাড়লে বিনিয়োগও কমে আসবে। এ জন্য প্রচলিত ব্যাংকগুলোর জন্য এডিআর ৮৫ শতাংশ ও ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশে ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয় চিঠিতে। বর্তমানে এই হার যথাক্রমে ৮৩ দশমিক ৫ ও ৮৯ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সম্পর্কে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে গেছে, পাশাপাশি রপ্তানিও কমেছে। ভোগ্যপণ্য আমদানি বন্ধ করা যাবে না, অন্যদিকে রপ্তানি আর প্রবাসী আয়ও বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে ডলার সংকট হচ্ছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে পর্যাপ্ত ডলার মিলছে না। এতে সময়মতো দায় পরিশোধ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি ডলারের দামও বেড়ে যাচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ডলার সরবরাহের প্রয়োজন। এ ছাড়া কৃষি খাতের ঋণ নিয়ে বলা হয়েছে, কৃষি বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক। ঋণ বিতরণের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলে ব্যাংকের হাতে থেকে যাওয়া টাকা অন্য ব্যাংকে দেওয়া হয়। এ জন্য ব্যাংকগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, মুনাফা হারাচ্ছে। কৃষিঋণের সুদহার ৯ শতাংশ, যা বর্তমানে আমানত হারের চেয়ে কম। বাধ্যতামূলক কৃষিঋণ দিতে গিয়ে এডিআর বেশি হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে কৃষিঋণকে এডিআর হিসাবায়ন থেকে বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছে বিএবি। আবাসন ঋণ নিয়ে বলা হয়েছে, আবাসন ঋণ শতভাগ নিরাপদ। এরপরও আবাসন খাতের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ২ শতাংশ সাধারণ সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে। এর কোনো সন্তোষজনক কারণ নেই। এ জন্য আবাসন ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি না রাখার দাবি জানিয়েছে বিএবি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র দেবাশিস চক্রবর্ত্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে এডিআর সমন্বয়ের সময় বাড়ানো হয়েছে, আবাসন ঋণেও সঞ্চিতি কমানো হয়েছে। অন্য বিষয়গুলো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানি না।’এর আগে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন বিএবির নেতারা। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে এই আইনের সংশোধনী পাস হয়। এতে আমানতকারীদের অধিকার সংকুচিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা।

No comments

Powered by Blogger.