খেলাপি ঋণ আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হুশিয়ারি

ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ব্যাংকগুলোর এ খেলাপি ঋণ আদায়ে ২০টি ব্যাংককে ডেকে হুশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায়ে ত্রৈমাসিক পরিকল্পনা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে। খেলাপি ঋণে জর্জরিত ২০টি ব্যাংকের সঙ্গে মঙ্গলবার জরুরি বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। যেসব ব্যাংকে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ রয়েছে এবং এই খেলাপি ঋণ আদায়ে যেসব ব্যাংকের পারফরম্যান্স ভালো নয়- এমন ২০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের ডাকা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, ২০টি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের তলব করা হয়েছিল। বৈঠকে তাদের খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এটি যাতে আর খুব বেশি না বাড়ে, তার জন্য ঋণ বিতরণ করার আগে ঋণের মান যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংক আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। জানা গেছে, ২০টি ব্যাংকের মধ্যে ৮টি হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক। বাকি ১২টি বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ নিয়ে একটি ডায়াগনস্টিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ যেমন বেশি, আদায়েও খুব বেশি সাফল্য নেই। গত তিন মাসে এক শতাংশের নিচে আদায় হয়েছে খেলাপি ঋণ, যা কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী তিন মাসে তারা কী পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় করবে, তার একটি বিশদ পরিকল্পনা দাখিল করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পরিকল্পনা ধরে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করবে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বৈঠকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে। এর বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাংকগুলোকে চিঠিও দেয়া হয়। তবে এবারই প্রথম তাদের কাছে কর্মপরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় কীভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, ব্যাংকগুলোকে সেদিকে মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে গ্রাহকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর সুরাহা করা যায় কিনা, তা বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ ব্যবস্থায় পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের সুবিধা দেয়ার কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমার কথা।
কিন্তু ফল উল্টো হচ্ছে। সুবিধা নেয়ার কিছুদিন পর পুনঃতফসিল করা অনেক ঋণ আবার খেলাপি হয়ে পড়ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এসব সুবিধা নিয়েছে তারাও এখন আবার পুনঃতফসিল করতে আবেদন করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে এ ধরনের বেশকিছু আবেদনও এরই মধ্যে জমা পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আর তিন মাস আগের তুলনায় বেড়েছে ৬ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের মধ্যে ৮২ শতাংশ বা ৬৫ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা মন্দমানের খেলাপি। এ মানের ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা সাধারণত কম থাকে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। মোট ঋণের ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ এখন খেলাপি। তথ্যমতে, খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়। গত সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। এসব ঋণের মধ্যে ৩১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা মন্দমানের খেলাপি। সরকারি দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আগের মতোই ৫ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা রয়েছে, যা তাদের মোট ঋণের ২৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় তিন মাসে খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা বেড়ে ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা হয়েছে। এক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের হার ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় মন্দমানের খেলাপি ২৭ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।

No comments

Powered by Blogger.