মাত্র এক লাখ টাকায় হত্যা : নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ

মাত্র এক লাখ টাকার বিনিময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের আওয়ামী লীগ নেত্রী স্বপ্না আক্তার হত্যা মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ সরকার। তিনি নবীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামী লীগ নেতা গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন এ টাকার জোগান দিয়েছেন। এজন্য ভাড়া করে আনা হয় পেশাদার দুই কিলারকে। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ও আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেন। গত ৪ জানুয়ারি গভীর রাতে ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে আনোয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পর দিন সকালে তাকে নবীনগর নিয়ে আসা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। ৮ জানুয়ারি বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। আনোয়ার ভাঙ্গুরা গ্রামের শামসুল হক মাস্টারের ছেলে। পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, স্বপ্নার সাথে আনোয়ারের রাজনৈতিক বিরোধ চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকায় স্থানীয় এমপির অফিসে আনোয়ারের সাথে স্বপ্নার তীব্র বাদানুবাদ হয়। এ সময় আনোয়ারকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করলে তিনি স্বপ্নার প্রতি প্তি হয়ে এই হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর পর দিনই হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয় বলে স্বীকারোক্তিতে জানান আনোয়ার। ২২ নভেম্বর খুন হন স্বপ্না আক্তার। আনোয়ার ঢাকায় গার্মেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত। স্থানীয় সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদলের সাথে তার রয়েছে সুসম্পর্ক। এক বছর আগে সংসদ সদস্যের মনোনয়নে তাকে ভাঙ্গুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়। আসন্ন জিনদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আনোয়ার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান। স্বপ্না চেয়েছিলেন অন্য একজনকে সাধারণ সম্পাদক করতে।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত ২০ নভেম্বর স্বপ্না আক্তার এলাকার ১৫-২০ জন লোক নিয়ে ওয়াজ মাহফিলের দাওয়াত দিতে সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদলের ঢাকার বনানী অফিসে যান। সেখানে আনোয়ার স্বপ্নাকে দেখে তাকে না জানিয়ে কেন ঢাকা এসেছে জানতে চাইলে উভয়ের মধ্যে বাগি¦তণ্ডা শুরু হয়। এ সময় স্বপ্না আনোয়ারকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন। এতে চরম অপমানবোধ করেন আনোয়ার। পুলিশ জানায়, এর পর দিনই নাহিদ সরকারের সাথে কথা বলে এক লাখ টাকার বিনিময়ে স্বপ্নাকে হত্যা করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন আনোয়ার। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার জানান, নাহিদকে পাঁচ-ছয়টা মামলার আসামি বানিয়েছিল স্বপ্না। সে কারণে নাহিদ স্বপ্নার ওপর চরম ুব্ধ ছিলেন। সে কারণে নাহিদকে কনভেন্স করতে তাকে বেগ পেতে হয়নি। আনোয়ার শুধু টাকা দেবেন এবং বাকি কাজ নাহিদ করার দায়িত্ব নেন। এজন্য দুইজন লোক ভাড়া করার কথা আনোয়ারকে জানিয়েছিলেন নাহিদ। আনোয়ারের স্বীকারোক্তি মতে, ভাড়াটে খুনিরা নিজস্ব সিএনজি নিয়ে আসে। সারা দিনই তারা স্বপ্নাকে ফলো করে এবং হত্যার পর তারা একই সিএনজিতে ফিরে যায়। আনোয়ার জানান, খুনের পর তাকে যেন কেউ সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য সেদিন তিনি এলাকায় অবস্থান করছিলেন। পুলিশ জানায়, হত্যার বিষয়ে আনোয়ার ও নাহিদের মধ্যে বেশির ভাগ যোগাযোগ হতো ইমোতে। উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর রাতে নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক স্বপ্না আক্তারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিন রাত ৯টায় সাতমোড়া ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে ফিরে জিনদপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে ভাঙ্গুরা বাজারে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তরা খুন করে তাকে। ওই রাতেই স্বপ্না আক্তারের ছোট ভাই আমীর হোসেন বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেন।
এতে যাদের সাথে স্বপ্নার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক বিরোধ আছে এমন ছয়-সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হচ্ছেন- জিনদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর, নবীনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ সরকার, ভাঙ্গুরা উত্তরপাড়ার আপন, ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি বিল্লাল মিয়া, তার ভাই হাবলু, চারিপাড়ার সাঈদ ও নাজিম উদ্দিন। এ ছাড়া হুড়ুয়া গ্রামের সিএনজি অটোরিকশাচালক জাহাঙ্গীরের নামও সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এজাহারে তাদের সাথে নিহত স্বপ্না আক্তারের মতবিরোধ থাকার কথা উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের দিয়ে তারা স্বপ্নাকে খুন করিয়েছেন বলে বলা হয়। পরে আরো তিনজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেন মামলার বাদি আমীর হোসেন। এ তিনজন হচ্ছেন- আনোয়ার হোসেন, ভাঙ্গুরার নাছিম ও হুড়ুরা গ্রামের শিহাব। উল্লিখিত আসামিদের মধ্যে আনোয়ারসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমীর হোসেন জানান, মূল এজাহারেই তিনি এই তিনজনের নাম দিয়েছিলেন। কিন্তু থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত নাজির আহমেদ তাদের নাম বাদ দেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আসামিদের রা করারও অভিযোগ আনে স্বপ্নার পরিবার। সম্প্রতি নাজির আহমেদকে নবীনগর থেকে বদলি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.