জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস ঠেকাতে মিসরের প্রস্তাব

টরেন্টোতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে
ফিলিস্তিনি ও তাদের সমর্থকদের বিক্ষোভ
জেরুসালেমের সঙ্কটের ব্যাপারে কোনো একটি দেশের একক সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা আইনগত বৈধতা পাবে না, এমন একটি প্রস্তাব উঠতে যাচ্ছে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিবাদে জাতিসঙ্ঘে এই প্রস্তাব তুলতে যাচ্ছে মিসর। তবে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ভেটো দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের সমর্থনে অন্যান্য দেশ যেন জেরুসালেমে দূতাবাস স্থানান্তর না করে, সে বিষয়টিও থাকবে প্রস্তাবে।
কূটনীতিকরা মনে করছেন, নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য এর সমর্থন করলেও বিরোধিতা আসতে পারে ওয়াশিংটন থেকে। তারা ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ মাসের শুরুতে তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে শহরটিকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেন ট্রাম্প। বিক্ষোভকারীদের সাথে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্ঘাতে শুক্রবার চারজন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় আরব বিশ্বের নেতারা। এই সিদ্ধান্তের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ শুরু হতে পারে, এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে পথে নেমে আসেন ফিলিস্তিনের মানুষ। গাজা উপত্যকা ও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরাইলি নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সাথে সঙ্ঘাত শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের। বিক্ষোভকারীদের সাথে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্ঘাতে শুক্রবার মারা গেছেন চারজন ফিলিস্তিনি। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের জেরুসালেম সফরের সময়ও বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের আন্দোলনকারী জোট 'ফাতাহ'।
১০ম দিনে ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা
ফিলিস্তিনের পবিত্র নগরী জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতির প্রতিবাদে ইন্তিফাদা বা সর্বাত্মক প্রতিরোধ পালন করছেন ফিলিস্তিনিরা। গতকাল ১৬ ডিসেম্বর এ ইন্তিফাদার নবম দিন অতিবাহিত হয়। ইন্তিফাদার অষ্টম দিনে শুক্রবার ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৪০ ফিলিস্তিনি। এ নিয়ে ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে আটজনে দাঁড়িয়েছে। ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর দুনিয়াজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। ৮ ডিসেম্বর থেকে তৃতীয় ইন্তিফাদার ডাক দেয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন বা হামাস। ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পরপরই জেরুসালেম, গাজা উপত্যকা, পশ্চিমতীরের রামাল্লা, হেবরন, বেথলেহেম, নাবলুস, কালকিলিয়া, তুলকার্ম ও জেনিনের রাস্তায় নেমে আসেন মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিরা। বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। হতাহত হন বহু বিক্ষোভকারী। তারপরও দমে যাননি মুক্তিকামী মানুষ। প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন তারা। ট্রাম্প আর নেতানিয়াহুর ছবি পুড়িয়ে, আমেরিকা-ইসরাইলের পতাকা জ্বালিয়ে দিয়ে স্লোগান তুলছেন, ফিলিস্তিনিদের রাজধানী নির্ধারণের অধিকার আমেরিকাকে কেউ দেয়নি। আর হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেছেন, ইসরাইল নামে কোনো দেশ নেই। তাই এর কোনো রাজধানীও থাকতে পারে না। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রামের বিপরীতে তাদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। শুক্রবার ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনিরা হচ্ছেন গাজা উপত্যকার ইয়াসির সকার (৩২), ইবরাহিম আবু সুরিয়া (২৯), পশ্চিম তীরের রামাল্লার মোহাম্মদ আমিন আকেল (২২) এবং পূর্ব জেরুসালেমের বাসেল ইবরাহিম। গাজায় আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কাদরা এক বিবৃতিতে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছেন। পূর্ব জেরুসালেমের উত্তরে আনাতা গ্রামে সংঘর্ষ চলাকালে ইসরাইলি বাহিনীর ছোড়া গুলি বুকে বিদ্ধ হলে ইবরাহিম আবু সুরিয়া নিহত হন। অন্যরাও ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় একই পরিণতি বরণ করেন।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের কঠোর হুঁশিয়ারি
ইসরাইলি সেনাদের বর্বরোচিত হামলায় চার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর তেল আবিবের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন বা হামাস। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলি সেনাদের হামলায় ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের নিহতের ঘটনায় আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে ইসরাইল একটি অপরাধী সরকার। হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেরুসালেমকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা কখনোই ট্রাম্পের ঘোষণাকে বাস্তবায়িত হতে দেবে না বরং নিজেদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় করে ছাড়বে।- বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.