গর্ভের সন্তান নষ্ট না করায় স্ত্রীকে নির্যাতন করে রাস্তায় ফেলে স্বামী

গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় স্ত্রীর ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে তাকে রাস্তায় ফেলে যায় এক পাষণ্ড স্বামী। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় হালিমা বেগম (৩৬) নামে ওই নারীকে উদ্ধার করে প্রথমে আড়াইহাজার উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে তার নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এ ঘটনা ঘটে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, উপর্যুপরি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে হালিমা মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় হালিমাকে উদ্ধার করেছেন আড়াইহাজা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিব ইসমাঈল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, হালিমা বেগমের স্বামী তাকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়। রাস্তাতেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। পরে সন্তান মারা গেলে হালিমা সন্তান ফেলে নিজেকে বাঁচাতে ছটফট করতে থাকেন। তখন আমি তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করি। পরে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্ধ এলাকার বাসিন্দা হালিমা বেগমের সঙ্গে বরিশালের আল আমিন নামের এক যুবকের বিয়ে হয়। তারা সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় ভাড়া থাকতেন। হালিমা যখন গর্ভবতী হন তখন তার স্বামী আলামিন তাকে সন্তান নষ্ট করতে বলে। এতে হালিমা অনীহা প্রকাশ করলে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে আলামিন। হালিমাকে এক প্রকারের ইনজেকশন দিয়ে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করারও প্রচেষ্টা চালায় সে। নির্যাতনে হালিমা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার দুপুরে হালিমার প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হলে তার স্বামী তাকে তুলে নিয়ে আড়াইহাজার উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পেছনে ফেলে চলে যায়। ওই সময় সম্ভবত রাস্তায় হালিমার সন্তান প্রসব হয়ে শিশুটি মারা যায়। আর হালিমা রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করতে থাকেন।
হালিমাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাঠকর্মী নজরুল ইসলাম ছুটে যান ডা. হাবিব ইসমাঈল ভূঁইয়ার কাছে। তিনি হালিমার চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর হালিমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. শান্তা ত্রিবিদী বলেন, হালিমা বেগমের সঙ্গে কথা বলে ও নিরীক্ষণ করে আমরা বুঝতে পেরেছি, তিনি ৭-৮ মাসে সন্তানটি প্রসব করেছেন। তার ওপর অনেক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। ফলে তিনি প্রায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার অবস্থায় আছেন। হালিমা বেগমের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আড়াইহাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটু দূর থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নবজাতকের পরিচয় পাওয়া না গেলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ বলছে নবজাতকের লাশটি হালিমার সন্তান। ঘটনার তদন্ত করে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.