জটিলতা এড়িয়ে নির্বাচনের পথ খুঁজছে ইসি

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ওই পদে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনের পথ খুঁজছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই সিটিতে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হওয়ায় মেয়র উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে যাতে আইনি জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আইন ও বিধি নিয়ে খুব শিগগিরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসবে কমিশন। এক্ষেত্রে আইন ও বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনের পক্ষেও মত রয়েছে কমিশনের। এ নিয়ে কমিশনারদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও হয়েছে। এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া মোট ৩৬টি ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা তৈরি করেছে কমিশন সচিবালয়। এতে দুই সিটিতে নতুন সাড়ে দশ লাখ ভোটার যুক্ত হয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে উপনির্বাচনে নতুন ভোটাররাও ভোট দেয়ার সুযোগ পাবেন। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনে ওয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হলে সেগুলোতে নির্বাচনের সময়সীমার বিষয়ে স্পষ্ট বিধান নেই। ওই আইনের ৩৪ অনুচ্ছেদ এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কখন করতে হবে তার বর্ণনা রয়েছে। সেখানে নতুন সিটি কর্পোরেশন গঠনের ক্ষেত্রে ১৮০ দিন, কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া কর্পোরেশন গঠন বাতিল ও কর্পোরেশন বিভক্তির ক্ষেত্রেও ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে নতুন ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্তের ক্ষেত্রে সেগুলোতে কতদিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এবং সেসব ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ কতদিন হবে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। মূলত এ কারণেই ঢাকা উত্তর সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনগত জটিলতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির বর্ধিত অংশ সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনের জন্য ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আলোচনা করবে। এজন্য আইন-বিধিতে সংশোধনের প্রয়োজন হলে, তা সমাধান করে নির্বাচনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। পহেলা ডিসেম্বর থেকে পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আইন অনুযায়ী শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে ওই পদে উপনির্বাচন করতে হবে। জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নতুন ১৮টি ও দক্ষিণ সিটিতে ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত করে গত জুলাইয়ে গেজেট প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ২০ আগস্ট ইসিকে অনুরোধ জানানো হয়। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদ কতদিন হবে তা আইনে উল্লেখ নেই। এ কারণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে মামলাজনিত আইনি জটিলতার আশঙ্কায় দুই সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেনি ইসি।
আরও জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটিতে নতুন ওয়ার্ডগুলো যুক্ত হওয়ার পর পুরনো ওয়ার্ডগুলোর কিছু কিছু অংশ নতুন ওয়ার্ডে যুক্ত হয়ে গেছে। এবং সে অনুযায়ী ভোটার তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এতে ঢাকা উত্তর সিটিতে নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার এবং দক্ষিণ সিটিতে যুক্ত হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার। ইসির কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এ একটি সংশোধনী আনা হলেই ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনের জটিলতা কেটে যাবে। ওই সংশোধনীতে সংযুক্ত হওয়া ওয়ার্ডের নির্বাচিত মেয়রদের কার্যকাল হবে বর্তমান পরিষদের মেয়াদ পর্যন্ত। অর্থাৎ বর্তমান পরিষদের ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এমন বিধান যুক্ত করা হলেই নির্বাচনের জটিলতা কেটে যাবে। তারা আরও বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এ নির্বাচনের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না। ঢাকা উত্তর সিটির তফসিল এমনভাবে ঘোষণা করতে হবে যাতে আগামী ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর মনোনয়নের দাখিলের সুযোগ থাকে। তাহলে ভোটার তালিকা প্রকাশ সংক্রান্তও কোনো সমস্যা দেখা দেবে না।

No comments

Powered by Blogger.