মিয়ানমারে আজও সহিংসতার ক্ষত

মিয়ানমারের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের পূর্বনির্ধারিত একটি উন্মুক্ত সমাবেশ ও প্রার্থনা সভায় অংশ নিয়েছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। বুধবার সকালে দেশটির রাজধানী ইয়াঙ্গুনে ঐতিহাসিক এই প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার দেশ মিয়ানমারের বেশির ভাগ মানুষই বৌদ্ধ। দেশটিতে মাত্র সাত লাখ ক্যাথলিক খ্রিস্টান রয়েছেন। পোপকে দেখতে জড়ো হন প্রায় দেড় লাখ ক্যাথলিক খ্রিস্টান। সভায় দেশটির শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাসহ সু চি প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে পোপ ফ্রান্সিস তার ভক্ত ও অনুসারীদের ক্ষমা ও ভালোবাসার মাধ্যমে ঘৃণা ও বিদ্বেষের জবাব দেয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে কারও বিরুদ্ধে প্রতিশোধ না নেয়ার আহ্বন জানান তিনি। তবে এদিনও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের কথা উল্লেখ করেননি পোপ। মিয়ানমার দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, ‘আমি জানি দশকের পর দশক ধরে মিয়ানমার ‘সহিংসতার ক্ষত’ বয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা মনে করতে পারি যে, ক্ষোভ ও প্রতিশোধ থেকে মনে শান্তি আসে। তার পরও প্রতিশোধের পথ যিশুখ্রিস্টের পথ নয়।’একই সঙ্গে মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সব জাতিগোষ্ঠীকে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানান তিনি। প্রার্থনা সভায় মানবজাতির কল্যাণ কামনা করে তিনি বলেন, প্রতিশোধপরায়ণতা কখনও শান্তি বয়ে আনতে পারে না। ক্ষমা ও উদারতা যিশুখ্রিস্টের প্রকৃত শিক্ষা। মিয়ানমার সফরে গিয়ে কঠিন কূটনৈতিক পরীক্ষার মুখে পড়েন পোপ ফ্রান্সিস। প্রথম দিনেই তাকে বাধ্য করা হয় দেশটির সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করতে। ভ্যাটিক্যান সূত্র জানায়, মিডিয়াবান্ধব হিসেবে পরিচিত পোপ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও তেমন একটা কথা বলছেন না। মিয়ানমারে সংবাদমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ জারি করে রাখা হয়েছে। রাখাইনে সেই আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ রয়েছেন সংবাদকর্মীরা। পোপকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে হুশিয়ারি দেয়া হয়, রোহিঙ্গাদের প্রশ্ন তুললেই সে দেশে থাকা ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ওপর নিপীড়ন নেমে আসতে পারে। এই বাস্তবতায় তিনি সু চির সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি। সু চিও এ ব্যাপারে কথা বলেননি। এদিকে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইহুদি ধর্মযাজকরা। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে ইসরাইলি সরকারের বিরুদ্ধে এক পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন ইহুদি রাব্বিরা। পিটিশনের নেতৃত্বে থাকা রাব্বি ডভ পেরেজ ইলকিন্স বলেন, এমন একটি পরিস্থিতিতে প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে রাব্বিদের একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দ্য রাব্বিনিক কল ফর হিউম্যান রাইটস নামে একটি ইহুদি মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে এই পিটিশন স্বাক্ষর অভিযান পরিচালিত হয়। এই পিটিশনে ইসরাইল সরকারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। পিটিশনে বলা হয়েছে, ইহুদি ও মার্কিন নাগরিক হিসেবে মিয়ানমার সেনাবহিনীর অস্ত্র প্রদান বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে মার্কিন বা ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ মিয়ানমার সেনাবাহিনী দেশটির একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর নির্মম জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে।’ এদিকে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দেশটির সরকারের কাছ থেকে প্রতিবেদন চেয়েছে জাতিসংঘ। ছয় মাসের মধ্যে ওই প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের নারী অধিকারবিষয়ক একটি পর্যবেক্ষক প্যানেল মিয়ানমার সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানায়। নারী-বৈষম্য বিলোপ সনদ সিডও’র পক্ষ থেকে মিয়ানমারে আগস্ট থেকে চলা সহিংসতায় নিহত নারী ও কিশোরীদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.