মহাক্ষমতাধর ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা উ. কোরিয়ার

নতুন ধরনের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) সফল পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এটি পুরো আমেরিকা মহাদেশের যে কোনো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এটিকে বলা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী আইসিবিএম। এর পাল্লা ১৩ হাজার কিলোমিটার। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, পরমাণু দেশ হওয়ার যে বাসনা তাদের ছিল তা পূরণ হয়েছে। খবর এএফপি, বিবিসি ও সিএনএনের। বুধবার ভোরের অন্ধকারের মধ্যে হোয়াসং-১৫ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণ করা হলেও সেটি ঘোষণা দেয়া হয় দুপুরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বিশেষ অনুষ্ঠানে। দেশটির নেতা কিম জং উন ব্যক্তিগতভাবে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের আদেশে সই করেন। মার্কিন বিজ্ঞানীদের একটি সংগঠন বলছে, উত্তর কোরিয়ার এ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো অংশে আঘাত হানতে সক্ষম। দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, পিয়ংইয়ং থেকে উৎক্ষেপণের পর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি ৪৫০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছায় তারপর নেমে এসে বুধবার সকালে উত্তর কোরিয়া থেকে ৯৬০ কিলোমিটার দূরে জাপানের জলসীমায় পড়ে। তবে আগে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের ওপর দিয়ে উড়ে গেলেও এবার সেটি করেনি। যে কোনো ধরনের ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহারের বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক পারমাণবিক অস্ত্র ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে আসছে উত্তর কোরিয়া। বুধবারের পরীক্ষার পর কিম উত্তর কোরিয়াকে শান্তিকামী দেশ বলে মন্তব্য করেন এবং দাবি করেন শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তারা সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাবে। উত্তর কোরিয়া ব্যালিস্টিক মিসাইলের সর্বশেষ পরীক্ষাটি চালিয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে। ওই মাসেই তারা পারমাণবিক অস্ত্রের ষষ্ঠ পরীক্ষাটি চালায়। উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উন বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো হুমকিই তাদের লক্ষ্য থেকে সরাতে পারবে না।
নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে ‘সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র’ ঘোষণা করার এক সপ্তাহের মাথায় আবারও ব্যালিস্টিক মিসাইলের পরীক্ষা চালাল পিয়ংইয়ং। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বুধবারই জরুরি বৈঠকে বসে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সাংবাদিকদের বলেন, উত্তর কোরিয়ার এবারের ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ছিল আগের যে কোনোটির চেয়ে বেশি। আর তারা যা করছে, তা পুরো বিশ্বের জন্য হুমকি। হোয়াইট হাউস জানায়, মিসাইলটি আকাশে থাকতেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ট্রাম্প পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি শুধু আপনাদের বলতে চাই, আমরা এটা দেখে ছাড়ব। আমরা এ পরিস্থিতি সামাল দেবই।’ এর আগে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে ‘আগুন ও ক্ষোভ’ দেখানোর হুমকি দিয়েছিলেন। তবে বুধবারের পরীক্ষার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, কূটনৈতিক পন্থা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্টস’ এক বিবৃতিতে বলেছে, উত্তর কোরিয়ার এবারের ক্ষেপণাস্ত্রটি ১৩ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো স্থানে সেটি আঘাত হানতে সক্ষম। তবে বুধবারের পরীক্ষায় উত্তর কোরিয়া হালকা কোনো মক ওয়্যারহেড ব্যবহার করেছে বলেই সংগঠনটি মনে করছে। সে ক্ষেত্রে এ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ওই দূরত্বে পারমাণবিক হামলা চালানো সম্ভব নাও হতে পারে, কারণ পারমাণবিক ওয়্যারহেডের ওজন অনেক বেশি। উত্তর কোরিয়ার এ ধরনের উসকানিমূলক আচরণ মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। এ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ ও জার্মানি।

No comments

Powered by Blogger.