কেন কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক

‘দুধের জন্য তুরস্ককে ধন্যবাদ!’ কয়েকদিন আগে টুইটারে এমন একটি মন্তব্য করেন কাতারের এক নাগরিক। এ মন্তব্যের সঙ্গে একটি ছবিও পোস্ট করেন তিনি। ওই ছবিতে দেখা যায়, কাতারের সুপার মার্কেটগুলোতে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে তুর্কি ব্র্যান্ডের দুধের বোতল। গত সপ্তাহে তুরস্ক থেকে কাতারে দুধ, ডিম, দই, মুরগির মাংস ও জুসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিমানে করে পাঠানো হয়। উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর কাতারের ওপর অবরোধ আরোপের ফলে দেশটিতে যেন খাদ্য সংকট তৈরি না হয় সেই প্রচেষ্টাতেই দুগ্ধজাত পণ্যসামগ্রী পাঠাচ্ছে তুরস্ক। মঙ্গলবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান বলেন, কাতারকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা অমানবিক এবং ইসলামী মূল্যবোধের বিরোধী। এটা কাতারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার শামিল। কাতারকে অবরোধ থেকে বাঁচাতে খাদ্যনিরাপত্তা ছাড়াও সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এরদোগান প্রশাসন। কিন্তু কাতারকে রক্ষায় কেন এত আগ্রহ তুরস্কের? প্রায় দুই সপ্তাহ আগে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসরসহ আটটি দেশ ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দেয়ার’ অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তাৎক্ষণিকভাবে তুরস্কের প্রতিক্রিয়া ছিল, কোনো পক্ষ না নেয়া এবং বিরোধ নিষ্পত্তিতে সংলাপের মধ্যস্থতা করা। এর দু’দিনের মধ্যেই নাটকীয়ভাবে কাতারের পক্ষ নেয় আঙ্কারা। অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এরদোগান বলেন, তুরস্ক যেভাবে আইএসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে, কাতারের অবস্থানও তাই। কাজেই মানুষকে বোকা বানানো বন্ধ করা উচিত। তুর্কি প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যের একদিন পর কাতারে যান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। সেখানে তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন। সাম্প্রতিক সময়ে কাতারের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ২০১৫ সালে সামরিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দুই দেশ। এ ছাড়া কাতারে সামরিক ঘাঁটিও তৈরি করেছে তুরস্ক। সেখানে বর্তমানে কয়েকশ’ তুর্কি সেনা মোতায়েন থাকলেও এটি পাঁচ হাজারে উন্নীত করা হবে।
কাতার সংকট সৃষ্টির কয়েকদিনের মধ্যেই দেশটিতে আরও সেনা মোতায়েনের একটি বিল পার্লামেন্টে অনুমোদন করে আঙ্কারা প্রশাসন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরব বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর দোহাকে অন্যতম মিত্র হিসেবে গ্রহণে আঙ্কারার অবস্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ রয়েছে। গত বছর এরদোগানের বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টার সময় প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সংহতি প্রকাশ করেন কাতারের আমীর। অভ্যুত্থান চেষ্টার পর এরদোগানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাতারের বিশেষ বাহিনীর ১৫০ সদস্যের একটি ইউনিট তুরস্ক পাঠানো হয়েছিল বলেও খবর পাওয়া যায়। দুই দেশের সরকারের মধ্যে আদর্শিক ঐক্যও রয়েছে। মিসরভিত্তিক ইসলামপন্থী দল মুসলিম ব্রাদারহুড ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে মনে করে না দেশ দু’টি। মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাতে ২০১৩ সালের সেনা অভ্যুত্থানকে নিন্দা জানিয়েছিল দুই দেশ। আবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো ইসলামপন্থী বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে কাতার ও তুরস্ক। ইরানের প্রতিও দেশ দু’টির দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম। দুই পক্ষই স্বীকার করে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তি হল ইরান। আর ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের অব্যাহত বিষোদ্গারের রাজনীতি থেকে সরে এসে উভয় পক্ষই সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে, চলতি সংকটে কাতারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইরানও। তুরস্কের মতোই ইরানও কাতারে খাদ্য সরবরাহের সঙ্গে সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে। পাশাপাশি কাতারে বিপুল বিনিয়োগও করেছে তুরস্ক।

No comments

Powered by Blogger.