যমুনার ভাঙন রোধ প্রকল্পে নানা শর্ত

যমুনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধ সংক্রান্ত প্রকল্প অনুমোদনে নানা শর্ত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া প্রস্তাবিত বিভিন্ন ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘যমুনা নদীর ভাঙন হতে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলার খুদবান্দি, সিংড়া ও শুভগাছা এলাকা সংরক্ষণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় কমানোসহ ১০ ধরনের শর্ত দিয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের আওতায় অহেতুক অর্থ ব্যয় কমাতে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও উপকরণ ক্রয়ের প্রস্তাবও বাদ দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দুটি জিপগাড়ি, ডাবল কেবিন পিকআপ, স্পিডবোট, অফিস ভবন মেরামত খরচ, সার্ভে যন্ত্রপাতি ক্রয়, এয়ারকুলার ক্রয় এবং বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ খাতে ব্যয় বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শর্তগুলো পূরণ সাপেক্ষে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পর তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। গত মাসে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, ইদানীং বিভিন্ন প্রকল্পে দেখা যাচ্ছে মূল কাজের চেয়ে গাড়ি-ঘোড়া ক্রয়, অফিস সাজানো ইত্যাদি বিষয়ে বেশি মনোযোগ থাকে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে মনোযোগ বাড়ানো উচিত। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩৮ কোটি ৯২ লাখ ১১ হাজার টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। গত ৪ এপ্রিল পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি,পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ওই বিভাগের সদস্য এ.এন.শামসুদ্দিন আজাদ চৌধূরী।
গত ১৩ এপ্রিল পিইসি সভার কার্যবিবরণী জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত ব্যয় প্রসঙ্গে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি,পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য যুগান্তরকে বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের কাজই হচ্ছে ব্যয় যৌক্তিক করা। আমরা প্রস্তাব পাওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি। যাচাই-বাছাই করে যদি দেখি অপ্রয়োজনীয় ব্যয় থাকে সেগুলো বাদ দেয়ার সুপারিশ করি। শুধু এ প্রকল্পেই নয়, এ রকম অনেক প্রকল্পেই পাওয়া যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিইসি সভায় প্রকল্পের ৪ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ বাবদ মোট ২৪১ কোটি ৭৫ লাখ, ৮০ হাজার টাকার সংস্থান রাখা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে এ খাতের ব্যয়ের বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ব্যাখ্যায় জানান, সেখানে কাজের কোনো ক্ষতি না করে শুধু সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগের ব্যবহার এবং স্টক পাইলের কম-বেশি করেই এ খাতে ব্যয় নামিয়ে আনা হয় ২০৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। বেঁচে যায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। এছাড়া নদী ড্রেজিং খাতে ৩২০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়। এ খাতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ২২৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় ব্যয় নামিয়ে আনা হয়। ফলে কমানো সম্ভব হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা। স্পার পুনর্বাসন খাতে ২৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে ব্যাপক আলোচনার পর প্রকল্পের স্পার নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। শেষ পর্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় দুটি স্পারের সংস্কার বাবদ ব্যয় ১৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা ধরা হয়।
এ খাতেও কমে যায় প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় দুটি জিপ ক্রয়ের জন্য দেড় কোটি টাকা, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনা বাবদ ৫০ লাখ টাকা এবং একটি স্পিডবোট ক্রয় বাবদ ১০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু এসব ব্যয় অপ্রয়োজনীয় মনে হওয়ায় প্রকল্প থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া অফিস ভবন মেরামত বাবদ ২০ লাখ টাকা, সার্ভে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ৩০ লাখ টাকা, বেথিমেট্রিক ও ব্যাংকলাইন সার্ভে বাবদ ৩০ লাখ টাকা, অফিস ফার্নিচারের জন্য ১০ লাখ টাকা, এয়ারকুলারের জন্য ২ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হলে এসব ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে পরিকল্পনা কমিশন। পরবর্তীতে এসব ব্যয় বাদ দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের শর্ত : প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- প্রকল্পটি যেহেতু মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর (এমটিবিএফ) ভুক্ত না হওয়ায় প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়টি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে। নদী ড্রেজিংয়ের ড্রেজিং করা বালি ড্রেজিং পয়েন্ট থেকে কত দূরত্বে এবং কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে তার বিস্তারিত বিবরণ পুনর্গঠিত ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে। পিইসি সভায় যেসব খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে সেসব ব্যয় কমিয়ে ডিপিপি পুনর্গঠন করতে হবে। প্রকল্পে প্রস্তাবিত জনবল নিয়োগে অর্থ বিভাগের জনবল নিয়োগ কমিটির সুপারিশ পুনর্গঠিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.