ষোড়শ সংশোধনী বিষয়ে আপিল শুনানিতে মতামত দিচ্ছেন এমিকাস কিউরিগণ

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আনা আপিলের ওপর শুনানি অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চে আজ নবম দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে বিষয়টির ওপর মতামত তুলে ধরছেন আদালত নিযুক্ত এমিকাস কিউরিগন। বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে করা ষোড়শ সংশোধনীকে সংবিধানের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল শুনানিতে আজ এমিকাস কিউরির মতামত দেয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধান হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। সেখানে কার কি ক্ষমতা তা নির্ধারণ করা আছে। বিচার বিভাগ, এর দায়িত্ব হলো সবাই নিজে নিজের সীমারেখার মধ্যে থাকছে কিনা, যদি সীমা লঙ্ঘন করে থাকে, তখন বিচার বিভাগ বলে যে, না এখানে সীমা লঙ্ঘিত হয়েছে। বিচারক অপসারণে কি বিধান থাকা উচিৎ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেটা ছিল সেটাই সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল। ষোড়শ সংশোধনী না থাকলে আমাদের যেটা ছিল সেটাই থাকবে। সেটার উপর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ও আছে। আজ মতামতে এমিকাস কিউরি হিসেবে এম আই ফারুকী বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায়ে সুপ্রিমকোর্ট সামরিক শাসনামলে জারি করা সব ফরমান বাতিল করলেও সুপ্রিম জুডিসিয়াল ব্যবস্থাকে রেখে দিয়েছে। এরপর সরকারও পঞ্চদশ সংশোধনীতে এ ব্যবস্থা রেখে দেয়। তারপর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী করে। এই ষোড়শ সংশোধনী স্বাধীন বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্রের মৌলিক কাঠামোর লঙ্ঘন। বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত হতে হবে বিচারকদের দিয়েই, রাজনীতিবিদদের দিয়ে নয়। এম আই ফারুকী ছাড়া মতামত উপস্থাপন করেন ড. কামাল হোসেন, এএফ হাসান আরিফ, আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া। এর আগে এমিকাস কিউরি হিসেবে বিষয়টির ওপর মতামত তুলে ধরেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিষ্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিষ্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, টিএইচ খানের পক্ষে তার ছেলে আফজাল এইচ খান। এছাড়াও এর আগে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি পেশ করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিট আবদনকারী পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিষয়টির ওপর মতামত দিতে ১২ বিশিষ্ট আইনজীবীকে এমিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র ও বিশিস্ট আইনজীবী হচ্ছেন- টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিষ্টার রফিক-উল হক, ব্যারিষ্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ, এ এফ হাসান আরিফ, আজমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ব্যারিষ্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, এম আই ফারুকী, এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিষ্টার ফিদা এম কামাল। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের ১৬৫ পৃষ্ঠার পূর্নাঙ্গ রায় গত বছর ১১ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ গতবছর ৫ মে বিষয়টির ওপর সংক্ষিপ্ত রায় দেয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য ছিলেন- বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। রায়টি লিখেছেন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের অপর বিচারপতি কাজী রেজাউল হক। তবে বেঞ্চের কণিষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আরেকটি রায় দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের রুলস অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে যে রায় দেয়া হয়, সেটাই চূড়ান্ত হবে। এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কেনো ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হবে এ মর্মে রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেয় হাইকোর্ট। এ মামলায় পাঁচ বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসিকে এমিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয় আদালত। এরই মধ্যে বিশিষ্ট আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টির ওপর এমিকাস কিউরিগণের মধ্যে অপর চারজন তাদের মতামত আদালতে তুলে ধরেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আলোকে বিচারপতি অপসারণের জন্য একটি খসড়া আইন প্রস্তত করা হয়েছে। অসদাচারণের জন্য সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’-এর খসড়ার গতবছর ২৫ এপ্রিল মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দেয়। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪-এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের নয়জন আইনজীবী রিট আবেদনটি করে। সূত্র : বাসস

No comments

Powered by Blogger.