নির্বাচনী তদন্ত থেকে সরে দাঁড়ালেন জেফ সেশন্স

২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে মস্কোর হস্তক্ষেপ নিয়ে বিচার বিভাগীয় যে তদন্ত চলছে, তা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার কথা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স। ওয়াশিংটনে মস্কোর রাষ্ট্রদূত সের্গেই কিসলিয়াকের সঙ্গে তিনি নির্বাচনী প্রচারের সময় অন্তত দুবার সাক্ষাৎ করেছেন, এই তথ্য ফাঁস হওয়ার পর প্রবল সমালোচনার মুখে তাঁকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। সেশন্স হলেন ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাঁর মস্কোর সঙ্গে গোপন ও অবৈধ যোগাযোগের প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হলো। এর আগে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ফ্লিন একই অভিযোগে পদত্যাগে বাধ্য হন। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে চলতি তদন্ত দেখভালের দায়িত্ব ছিল সেশন্সের। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, সেশন্সের ব্যাপারে তাঁর পুরো আস্থা রয়েছে। কিন্তু মস্কোর সঙ্গে গোপন সম্পর্ক বজায় রাখায় তাঁর পক্ষে এই তদন্ত নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা সম্ভব হবে না, কংগ্রেসের উভয় দলের একাধিক সদস্যের এই বক্তব্যের মুখে সেশন্স নিজেই তদন্ত থেকে নিজেকে বিযুক্ত রাখার ঘোষণা দিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের অন্য নেতারা পুরো ব্যাপারটাকে নির্বাচনে পরাজিত ডেমোক্র্যাটদের নোংরা খেলা বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর দলের ভেতর থেকেই যখন একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা সেশন্সের ব্যাপারে তাঁদের সন্দেহের কথা তোলেন এবং এই তদন্ত থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানোর দাবি সমর্থন করেন, তখন সেশন্সের পক্ষে দায়িত্বে টিকে থাকা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
মাইক ফ্লিনের পদত্যাগের মতো সেশন্সের নাটকীয় বিযুক্তির পেছনেও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যমাধ্যম, যাকে ট্রাম্প অনবরত অসৎ ও তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন। চার দিন আগে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা প্রথম জানায়, সেশন্স ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় কিসলিয়াকের সঙ্গে দুবার সাক্ষাৎ করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে মার্কিন সিনেটে যে শুনানি হয়, তাতে সেশন্স এই তথ্য জানাতে ব্যর্থ হন। এই শুনানির সময় ডেমোক্রেটিক সিনেটর আল ফ্রাঙ্কেন তাঁকে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের সঙ্গে যুক্ত কেউ রুশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, এই তথ্য জানতে পারলে তিনি কী ব্যবস্থা নেবেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে দু-একবার ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে বলা হয়েছে, কিন্তু আমি রুশদের সঙ্গে কখনোই কোনো রকম যোগাযোগ করিনি।’ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যদের উদ্ধৃত করে কিসলিয়াকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের বিবরণ প্রকাশিত হলে সেশন্স প্রথমে তা সরাসরি অস্বীকার করেন, পরে যুক্তি দেখান যে তিনি সিনেটের সামরিক বিষয়সংক্রান্ত কমিটির একজন সদস্য হিসাবে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু এই কমিটির সদস্য হিসেবে তাঁর বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা সংগত হলেও বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে নয়। ওয়াশিংটন পোস্ট এই কমিটির বাকি ২৫ জন সদস্যের প্রত্যেকের কাছে জানতে চান, তাঁরা কেউ নির্বাচনী প্রচারের সময় রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না। তাঁরা সবাই জানান, কেউ কখনোই কিসলিয়াকের সঙ্গে কথা বলেননি। তাহলে সেশন্সকে একা কেন রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলতে হলো?
সেশন্স সরে যাওয়ার পর মস্কোর হস্তক্ষেপ প্রশ্নে তদন্তকাজ পরিচালনার দায়িত্ব বর্তাবে ওবামা আমলে নিয়োগ পাওয়া ভার্জিনিয়ার সাবেক ফেডারেল অ্যাটর্নি, বর্তমানে অস্থায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল ডানা বেন্টের ওপর। জানা গেছে, শুধু ফ্লিন ও সেশন্সই নন, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারও রাষ্ট্রদূত কিসলিয়াকের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারের সময় নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে কথা বলেছেন। ট্রাম্পের একজন আইনজীবীও রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছেন। এর আগে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছিল, ট্রাম্পের সাবেক ক্যাম্পেইন চেয়ারম্যান পল মানাফোর্টেরও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। এখন প্রশ্ন হলো, শুধু তদন্ত থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলকে বাদ দিলেই কি ডেমোক্র্যাটরা সন্তুষ্ট হবে? একাধিক ভাষ্যকারের ধারণা, কোণঠাসা ট্রাম্প প্রশাসনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে তাঁরা সেশন্সের পদত্যাগ ছাড়াও এই তদন্ত পরিচালনায় একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি বা কমিটি নিয়োগের দাবি করবেন। সত্য বলবেন, এই শপথ নেওয়ার পর তিনি মিথ্যাচার করেছেন, একাধিক ডেমোক্রেটিক নেতা এই অভিযোগে শুধু এই তদন্ত থেকে সরে দাঁড়ানোই নয়, তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ন্যান্সি পেলোসি যুক্তি দেখিয়েছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনি দেশের ‘প্রধান পাহারাদার’। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটদের নেতা ন্যান্সি পেলসি কিঞ্চিত রহস্যের হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘মস্কোর কাছে ট্রাম্পের গোপন কী থাকতে পারে?’ ওয়াশিংটনে এখন এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

No comments

Powered by Blogger.