করণীয় নির্ধারণে এ মাসেই ইজিএম

এ মাসেই বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিজিএমইএ ভবন সরাতে ৬ মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। রোববার থেকেই সময় গণনা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় আর সময়ক্ষেপণ করতে চায় না সংগঠনটি। আদালতের রায় মেনে অফিস অন্যত্র স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। কিন্তু ১৪ তলার বিশাল ভবন কে ভাঙবে। খরচ আসবে কোত্থেকে এ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। তবে বিজিএমইএ নেতারা একমত হয়েছেন, বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে সবার মতামত নিয়েই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া বিতর্কিত বহুতল ভবনটি ভাঙার কোনো দায়দায়িত্ব বিজিএমইএ নিতে রাজি নয়। আদালতের নির্দেশ মেনে রাজউককে দিয়েই এই অপ্রীতিকর কাজটি শেষ করতে চান নেতারা। তবে এজন্য সম্ভাব্য সব খরচ রাজউককে দেয়া হবে। তবে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার আগে রফতানি সংক্রান্ত দাফতরিক কর্মকাণ্ড সারতে কারওয়ান বাজার, পান্থপথ বা উত্তরার পছন্দসই কোনো একটি বহুতল ভাড়াবাড়িতে উঠবে বিজিএমইএ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান রোববার যুগান্তরকে বলেছেন, আমরা আগামী ছয় মাসের মধ্যেই বিজিএমইএ ভবন ছেড়ে দেব।
একই সঙ্গে নিজেদের নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়েও কার্যক্রম শুরু করব। তবে কোন প্রক্রিয়ায় কীভাবে এসব কার্যক্রম শেষ করব, তা সবার সঙ্গে বিশেষ আলোচনা করেই ঠিক করা হবে। জানা গেছে, চলতি মাসের শেষ দিকে বিজিএমইএ মিলনায়তনে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতিগণসহ পোশাক খাতের সব নেতা ও সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। ইজিএমে ভবন ভাঙার ব্যয়ভারের উৎস নির্ধারণ করা হবে। ভবনটি ভাঙার দায়িত্ব বিজিএমইএ পালন করবে, না রাজউক ভাঙবে সেটিও চূড়ান্ত হবে। একইভাবে রাজধানীর উত্তরায় সরকারের দেয়া জমিতে বিজিএমইএর নতুন ভবন কোন প্রক্রিয়ায় নির্মাণ করা হবে। সম্ভাব্য নির্মিতব্য ভবন কত তলা এবং ব্যয় কেমন হবে, অর্থায়ন কীভাবে হবে তা নিয়েও আলোচনা হবে। সূত্র আরও জানায়, নতুন ভবনের দ্রুত নির্মাণ, সম্ভাব্য ব্যয়ের অর্থ জোগান পেতে ইজিএমএর আগে খুব শিগগরিই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হবেন বিজিএমইএ নেতারা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সবুজ সংকেত পেলে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গেও দেখা করবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নিষ্কণ্টক খাস জমি বিজিএমইএর নামে দ্রুত নিবন্ধন শেষ করা। একই সঙ্গে মাত্র চার থেকে পাঁচ শতাংশ সুদে ভবন নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয়ের অর্থ বিজিএমইএর অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ হিসাবে পাওয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর একাধিক নেতা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ভবন ভাঙার বিষয়ে আদালত বিজিএমইএকে ব্যয় বহন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই বিজিএমইএ সম্ভাব্য ব্যয় বহন করবে। তবে ভবন ভাঙার দায়িত্ব নেবে না। ভবনটি রাজউককেই ভাঙতে হবে। এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, ভবনটি নিয়ে এমনিতেই তারা বিভিন্ন সময়ে সুশীল সমাজ, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং গণমাধ্যমের বিষোদগার শুনেছেন।
এখন ভবন ভাঙার দায়িত্ব নিয়ে কোনো অবস্থাতেই জানমালের ক্ষতি হওয়ার দায়ভার নিতে রাজি নন তারা। তাহলে আরেক দফা বিষোদগারের মুখোমুখি হতে হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইএর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, বিজিএমইএর বর্তমান নেতৃত্ব এ বিষয়ে খুবই সচেতন। তারা এজন্য অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক দু’ভাবেই কাজ করছে। যেহেতু এটি একটি ফরমাল অর্গানাইজেশন। তার অনেক কর্মকাণ্ড থাকে। এখানে ৩০০ লোক কাজ করে। রফতানি সংক্রান্ত ইউটি এবং ইউডি বিজিএমইএ থেকেই দেয়া হয়। এর পাশাপাশি বিজিএমইএ ৫টি স্কুল এবং ১২টি ক্লিনিক পরিচালনা করছে। শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য নানারকম কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর সঙ্গে পুরো পোশাক খাতের সম্পর্ক হৃৎপিণ্ডের মতো। তাই ভবন ভাঙা এবং নতুন ভবনে যাওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বিজিএমইএর সহ-সভাপতি (অর্থ) মো. নাছির যুগান্তরকে বলেন, আদালতের আদেশ শিরোধার্য। আমরা ভবন ছেড়ে দেব। একই সঙ্গে খুব দ্রুতই সবার সঙ্গে পরামর্শ করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করব।

No comments

Powered by Blogger.