ভাষার মর্যাদা রক্ষা করার দাবি

ভাষাসংগ্রামীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে গতকাল শুক্রবার নওগাঁয় সাইকেল শোভাযাত্রা হয়েছে। এতে প্রায় এক হাজার কিশোর-তরুণ অংশ নেন। শোভাযাত্রায় অংশ নেন দুবারের এভারেস্টজয়ী বাংলাদেশি এম এ মুহিত ও এভারেস্টজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার। স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ ওই শোভাযাত্রার আয়োজন করে। পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ পুলিশ লাইনস মাঠে এর উদ্বোধন করেন। সেখানে বক্তব্য দেন একুশে পদক পাওয়া নৃত্য গবেষক ও নৃত্য পরিচালক আমানূল হক, ভাষাশহীদ ডা. মনজুর আলমের ছেলে হাসান ইমাম, নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান প্রমুখ। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে নওগাঁ সরকারি কেডি স্কুল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। এখানে আমানূল হক, এম এ মুহিত ও নিশাত মজুমদারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একুশে পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁদের ক্রেস্ট দেওয়া হয় এবং উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে একুশে পরিষদের সভাপতি ডি এম আব্দুল বারী সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আমিনুর রহমান।
বেলা তিনটায় নৃত্য গবেষক আমানূল হক কেডি স্কুল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পাঁচ দিনব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করেন। মেলায় প্রথমা প্রকাশনসহ বিভিন্ন প্রকাশনীর ২৬টি স্টল রয়েছে। সন্ধ্যায় একই মঞ্চে স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে শতকণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও ভাষার গান গাওয়া হয়। এ ছাড়া নৃত্যানুষ্ঠান ও নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় মঞ্চনাটক পরিবেশিত হয়। একুশের চেতনা ছড়িয়ে দিতে ‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’ এ বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেয়। ১ ফেব্রুয়ারি ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়। ২ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালির আত্মত্যাগের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে ছাত্রসমাবেশ করে। ভাষাশহীদ ডা. মনজুর আলমের ছেলে হাসান ইমাম বলেন, ‘আমার বাবা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে রফিক, জব্বার, বরকতসহ নাম না জানা অনেক শহীদের সঙ্গে রক্ত দিয়েছেন। পরে তাঁকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপরও মনে হয়, নতুন প্রজন্ম তাঁর নামটি তেমন জানে না। একুশে পরিষদের কল্যাণে তিনিসহ অন্যান্য ভাষাসংগ্রামীর বীরত্বগাথা নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে।’ নৃত্য গবেষক আমানূল হক বলেন, একুশে পরিষদের মতো দেশের সব সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দিলে শুভ চেতনার কোনো দিন মৃত্যু হবে না। যত দিন বাংলা রবে, বাঙালি জাতি রবে, তত দিন একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জিইয়ে রবে।

No comments

Powered by Blogger.