ভেতরে আবর্জনায় ভরা, হকারদের দৌরাত্ম্য

ব্যানার টানিয়ে স্কুলের শিক্ষাসফর। ঘাসের ওপর চাদর বিছিয়ে পরিবারের বনভোজন। পারিবারিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টও চলছে। সঙ্গে বসন্তের ফুলের সমারোহের শোভা তো আছেই। মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে (বোটানিক্যাল গার্ডেন) দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। তবে নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ লাগানো হয়নি দীর্ঘদিন।
হকারদের দৌরাত্ম্য ও নোংরা আবর্জনাময় পরিবেশ নিয়ে দর্শনার্থীদের অসন্তোষ। গাছের সারির ফাঁকে ফাঁকে ঝরা পাতার স্তূপ। একটু দমকা হাওয়ার ঝাপটা লাগলেই ঝরে পড়ছে মলিন পুরোনো পাতার রাশি। পা বাড়ালেই মর্মর শব্দ। তবে গাছের ন্যাড়া ভাব কেটে গেছে। বেশির ভাগ শাখাতেই উঁকি দিচ্ছে কচি সবুজ পাতা। গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, উদ্যানের ভেতরে দুটি স্কুল এসেছে শিক্ষা সফরের জন্য। আর পুরো উদ্যানেই খোলা জায়গাতে চাদর বিছিয়ে চলছে পারিবারিক আয়োজনে ছোটখাটো বনভোজন। রান্না করা নিষেধ বলে খাবার বাইরে থেকেই নিয়ে এসেছে সবাই। আনিস আহমেদ এসেছেন সপরিবার। সঙ্গে ব্যাট-বল। ছেলে ব্যাট করছে, মেয়ে বোলার। তিনি ফিল্ডিং করছেন, স্ত্রী আম্পায়ার। আনিস বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য তো শহরে খেলার জায়গা কম। খেলবে কোথায় ওরা? আজকে ছুটির দিনে ভাবলাম ব্যাট-বল নিয়ে যাই। বাচ্চারাও মজা পাচ্ছে।’ উদ্যানে ঢুকতে শুরুতেই হাতের বাঁয়ে আছে একটি গোলাপ বাগান। বাগানে বাহারি রঙের ছোট-বড় গোলাপ। এখানে বেড়াতে আসা মানুষের ছবি তোলার হিড়িক। ডান দিকে কৃত্রিম লেক ও দ্বীপ। উদ্যানজুড়ে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির গাছ। প্রতিটি গাছেই ছোট করে পরিচিতি দেওয়া আছে। মূল রাস্তা ধরে খানিকটা এগোলে সেকশন-৭-এ একটি সাইনবোর্ড, লেখা—দর্শনার্থী কেন্দ্র। কিন্তু তালাবদ্ধ। উদ্যানের একজন ফরেস্টার মজিবর রহমান বলেন, কেন্দ্রটি এখনো চালু হয়নি। এটাকে জাদুঘরের মতো করা হবে। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়াও উদ্ভিদ উদ্যানটির যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলা।
এ নিয়ে কয়েকজন দর্শনার্থীও অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। পদ্মপুকুরে পদ্ম ফোটার সময় বলা আছে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর। কিন্তু পুকুরটি আবর্জনায় ভরা। উদ্যানের ভেতরে নানা বয়সী হকার ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের দৌরাত্ম্য নিয়েও অভিযোগ করলেন দর্শনার্থীরা। মাদিয়া নামের আট বছর বয়সী এক হকার পানি ও টিস্যু পেপার বিক্রি করে। এখানে ঢোকার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সে বলে, ‘দারোয়ানরে ৫০-৬০ টাকা দিলেই ঢুকতে দেয়।’এখানে প্রতিটি টয়লেটের পাশেই খাবারের পসরা সাজানো। উদ্যানের পক্ষ থেকে খাবারের কোনো ক্যানটিন নেই। ক্যানটিন যেটি ছিল তা অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আয়েশা খাতুন নামের এক দর্শনার্থী বলেন, হকাররা খাবারের দাম বেশি রাখে। অনেক সময় জোর জবরদস্তি করে। কর্তৃপক্ষের কোনো ব্যবস্থা থাকলে সুবিধা হতো। ১৯৬২-১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ২০৮ একরের এ উদ্যানে এখন ১ হাজার ১০ প্রজাতির উদ্ভিদ আছে। তবে বন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান নিয়ে ২০১৪ সালের একটি পরিচিতিতেও প্রজাতির সংখ্যা একই। তিন বছরে সংখ্যা বাড়া-কমার ব্যাপারে উদ্যানের পরিচালক ছায়ীদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করে জরিপ করা হয়নি। এ ছাড়া সম্প্রতি নতুন প্রজাতির কোনো গাছ লাগানো হয়নি। আবর্জনা প্রসঙ্গে বলেন, নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। দর্শনার্থীদের সচেতনতা দরকার। হকারদের বিষয়টি তিনি দেখবেন।

No comments

Powered by Blogger.