প্রাচীন স্থাপত্য বাসুদেব মন্দির

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সুপাতলা গ্রামের শ্রীশ্রী বাসুদেবের চারটি মন্দির প্রাচীন স্থাপত্য ও পুরাকীর্তির নিদর্শন। সপ্তম শতকে নির্মিত এ মন্দিরগুলোর এখন বেহাল দশা। চারটির মধ্যে তিনটি মন্দিরের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এগুলোর সংস্কার জরুরি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। এলাকাবাসীও অনেক দিন ধরে এসব মন্দির সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বাসুদেবের দোল মন্দিরের বিভিন্ন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। দেয়ালে বটগাছ, শেওলা ও পরগাছা জন্মেছে। ঝুলন মন্দিরের সামনে প্রার্থনার স্থানেও ফাটল আছে। এ মন্দিরের দেয়াল থেকে খসে পড়েছে টেরাকোটা। বাসুদেবের মূল মন্দিরের দেয়ালের বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। চারপাশে যথাযথ সীমানাপ্রাচীর না থাকায় মন্দিরগুলোর নিরাপত্তাঝুঁকিও রয়েছে। প্রতিদিন অনেক ভক্ত আসেন, অথচ মন্দিরের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় যেকোনো সময় ভবন ভেঙে পড়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে।
এ ধরনের পুরোনো মন্দির বা যেকোনো পুরাকীর্তির সংস্কার ও সংরক্ষণ ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর্থিক অসংগতির কারণে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে এগুলো সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে বা নিজেদের মতো করে এর সংস্কারের উদ্যোগ যথাযথ হতে না–ও পারে, কারণ পুরাকীর্তি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ও কৌশল নিতে হয়। দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের। বিয়ানীবাজারের বাসুদেবের মন্দিরগুলো সংস্কার করে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে আমরা তাই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়া না হলে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাক্ষী এসব মন্দির কালের গহ্বরে হারিয়ে যাবে। দেশের প্রাচীন স্থাপত্য ও পুরাকীর্তি যথাযথ সংরক্ষণ করতে পারাটা একটি সভ্য দেশ ও জাতির লক্ষণ। শুধু বাসুদেবের মন্দির নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও ধ্বংসের মুখে যেসব প্রাচীন স্থাপনা ও পুরাকীর্তি রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে পর্যায়ক্রমে সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.