এশিয়ায় থাকতে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র

এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ওবামা বলেছেন, তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরও এ অঞ্চলে যুক্ত থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখানে থাকতে এসেছে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১১তম ও শেষবারের মতো এশীয় অঞ্চলে সফরে রয়েছেন তিনি। খবর এএফপির। ওবামার আট বছরের শাসনামলে এ অঞ্চলে তার ‘পিভট টু এশিয়া’ নীতির ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও এশিয়ায় মার্কিন নীতি অপরিবর্তিত থাকবে বলে মনে করেন। লাওসের ভাষণে ওবামা বলেন, ‘এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ নতুন নয়। আর এটা ফুরিয়েও যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার ছিল এশীয় দেশ ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা।’ এই নতুন সম্পর্ক স্থায়ী হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
ওবামা বলেন, ‘আমরা এখানে থাকতে এসেছি। সুখের সময় হোক, আর দুঃখের সময় হোক আপনারা যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পাবেন।ভাষণে চীনের প্রসঙ্গেও কথা বলেন ওবামা। উদীয়মান বিশ্বশক্তি চীন এশিয়ায় মার্কিন প্রবেশকে সন্দেহের চোখে দেখছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বেইজিংয়ের উত্থানকে ওয়াশিংটন স্বাগত জানায়। তবে সেটা শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল ও উন্নয়নমূলক হবে। আমরা সবাই তাতে উপকৃত হব।’ পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্যের প্রতিবাদ করে ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন মেনে বিমান উড্ডয়ন ও নৌ পরিচালনা করবে এবং মিত্রদেরও তাতে সহায়তা করবে। ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির কথাও তুলে ধরেন ওবামা। উত্তর কোরিয়াকে হুশিয়ার করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, উসকানিমূলক আচরণ দেশটিকে আরও একঘরে করে তুলবে। ওবামা বলেন, ‘আজ পার্কের (দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে আমার বৈঠকে নিশ্চিত করতে চাই আমাদের সম্পর্ক কখনো ভাঙার নয়। এটা আরও মজবুত হবে। বিশ্ব সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
তাই উত্তর কোরিয়ার বোঝা উচিত তাদের উসকানিমূলক আচরণে তারা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।’ লাওসকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ : লাওসের ভূমি থেকে প্রায় ৮ কোটি অবিস্ফোরিত গুচ্ছবোমা অপসারণের জন্য ৯ কোটি ডলার সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মঙ্গলবার দেশটির রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে দেয়া এক বক্তব্যে ওবামা বলেন, ‘মার্কিনিদের গোপন বোম্বিং মিশনের কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটির অনেক অঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই লাওসকে সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’ সিএনএন জানায়, এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট লাওস ভ্রমণে গেলেন। সেখানে তিন দিনের যাত্রা বিরতি করবেন তিনি। বিরতির প্রথম দিন লাওসের জনগণের উদ্দেশে অর্থ সাহায্যের ঘোষণা দেন ওবামা। আগামী তিন বছরে কয়েক ধাপে এ অর্থ দেয়া হবে লাওসকে। ওবামা বলেন, ‘ভিয়েতনাম যুদ্ধের এতদিন পরও এখনও যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে লাওসের মানুষ। কিছু বোমা এখনও অবিস্ফোরিত অবস্থায় পড়ে আছে।
কৃষকরা জমি চাষ করতে গিয়ে অথবা শিশুরা খেলতে গিয়েও এসব বোমার বিস্ফোরণ ঘটছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমি অর্থ বরাদ্দ দিলাম।’ লাওসের প্রেসিডেন্ট বাউনহাং ভোরাচিত ওবামার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘এখনও প্রতিবছর গড়ে ৫০ জন মারা যাচ্ছে এসব বোমার বিস্ফোরণে।’ এদিকে এখন পর্যন্ত অবিস্ফোরিত বোমার মাত্র ১ শতাংশেরও কম পরিমাণ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় মার্কিনভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থা। ৪০ বছর আগে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় কয়েক কোটি গুচ্ছবোমা নিক্ষেপ করা হয় মার্কিন বোমারু বিমান থেকে। বিশ্বব্যাপী পড়ে থাকা অবিস্ফোরিত বোমাগুলো উদ্ধারের জন্য এ বছর প্রায় ২০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে নিজেদের আরও দায়িত্ববান হওয়ার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন।

No comments

Powered by Blogger.