শান্তিরক্ষা সফল করে তোলা

আগামীকাল বৃহস্পতিবারলন্ডনে শুরু হতে যাচ্ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বা পিস মিশন আরও সফল করে তোলার বিষয়ে দিনব্যাপী আলোচনা। যুক্তরাজ্য ৭০টির বেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের এতে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমরা আনন্দিত যে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ এই আয়োজনের যৌথ উদ্যোক্তা হতে সম্মত হয়েছে; বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘের মিশনে আপনারা ৭২ হাজারের ওপর শান্তিরক্ষী নিয়োজিত করার মধ্য দিয়ে যে বিশাল অবদান রেখে চলেছেন, আমরা তার গুরুত্ব উপলব্ধি করি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন নতুন এবং বিগত দিনের অকল্পনীয় সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। গত পাঁচ বছরে আমরা দেখেছি, কীভাবে প্রাণঘাতী সংঘাতের ব্যাপকতা ঘটেছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারবার জাতিসংঘের দ্বারস্থ হয়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় আমরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শান্তিরক্ষা মিশনে বেশি বেশি শান্তিরক্ষী চাচ্ছি। শুধু বেসামরিক নাগরিকের নিরাপত্তা নয়, আমরা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান, আইনের শাসন ফিরে পেতে দেশগুলোকে সহায়তা দেওয়া কিংবা জীবনরক্ষাকারী মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরাপদ করিডর তৈরির কাজেও শান্তিরক্ষীদের সহায়তা চাচ্ছি।
প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে, বিশ্বের যেকোনো স্থানে শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করার জন্য আমরা সুসজ্জিত এবং যথার্থ সক্ষমতাসম্পন্ন শান্তিরক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধির তাগিদ দিচ্ছি। এ লক্ষ্য অর্জনে শান্তিরক্ষা বা পিস কিপিংয়ের তিনটি ‘পি’, যেমন প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা, প্লেজ বা অঙ্গীকার এবং পারফরম্যান্স বা কর্মসিদ্ধি—এই বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে। পরিকল্পনা বলতে আমরা বুঝি, প্রকৃত চ্যালেঞ্জ স্পষ্ট করে জেনে, কাজ সম্পাদনের জন্য উপযুক্ত সক্ষমতা চিহ্নিত করার মাধ্যমে যথাযথ স্থানে জাতিসংঘ মিশনকে নিয়োজিত করা। শান্তিরক্ষীদের নিয়োজিত করা থেকে শুরু করে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহার করা পর্যন্ত একটি মিশনের অবশ্যই লক্ষ্য সম্পর্কে সজাগ থেকে স্পষ্টভাবে সবকিছু অনুধাবন করতে হবে। অঙ্গীকারের অর্থ হচ্ছে, দেশগুলোর সেনা, পুলিশ ও সরঞ্জামাদি পাঠানোর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় চাহিদা অনুযায়ী সক্ষমতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা। আলাদা আলাদা মিশনের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে আমাদের উচিত অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। এর চমৎকার একটা উদাহরণ হতে পারে, মিশন কমান্ডারের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে হাইতিতে বাংলাদেশের নারী পুলিশ ইউনিটের নিয়োজন। এ কারণেই সোমালিয়া ও দক্ষিণ সুদানে নিয়োগ দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য শান্তিরক্ষায় তার সেনাসংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। অনন্য প্রকৌশল–দক্ষতার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য আরও নিরাপদ ও সুরক্ষিত আবাসস্থল গড়ে তুলেছে।
উপসংহারে বলতে পারি, আমাদের অবশ্যই মাঠপর্যায়ে কাজের উৎকর্ষ ঘটাতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে শান্তিরক্ষীদের যথার্থ প্রশিক্ষণ প্রদান, সরঞ্জামাদি সরবরাহ এবং নিয়োগের আগে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করতে হবে। মাঠে থাকতে হবে সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্ব। এ জন্য যুক্তরাজ্য শুধু নিজের শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে না, শান্তিরক্ষী প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোকে সমৃদ্ধ করতে সহায়তা দিচ্ছে, বাংলাদেশের ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশনসের (বিআইপিএসওটি) মতো সহযোগীদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এবং একই সঙ্গে সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে বিকশিত করতে সাহায্য করছে যুক্তরাজ্য। গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ওবামা, এ লক্ষ্য অর্জনে শান্তিরক্ষা মিশনকে সহায়তা দিতে আয়োজন করেন লিডার্স সামিট। এই সম্মেলন ৫০টির বেশি দেশের তরফ থেকে সেনাসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামাদির ক্ষেত্রে নতুন অঙ্গীকারের জন্ম দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ওবামা যে কাজ শুরু করেছিলেন, সেই কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সেই দেশগুলো এবার লন্ডনে উপস্থিত হয়েছে। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের হালচাল জেনে, একে আরও প্রসারিত করব আমরা। শান্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে আরও সেনা মোতায়েন করা, যেখানে নারীর যেন আরও শক্তিশালী ভূমিকা থাকে, সে বিষয়টিও আমরা দেখব।
এসব নতুন নতুন এবং ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিশ্চিত করার ওপর নির্ভর করছে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ অসহায় মানুষের জীবন। ব্যারোনেস অ্যানেলে: ফরেন ও কমনওয়েলথ অফিসে ব্রিটিশ কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘ–বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ ও সংঘাত–বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি।

No comments

Powered by Blogger.