সিরিয়ার কারাগারে বিপন্ন মানবতা

লিবিয়ায় সংঘাতে প্রতিদিনই ধ্বংস হচ্ছে বহু স্থাপনা।
বৃহস্পতিবার সিরতে শহরে বোমা হামলার পর ধোঁয়া
উড়তে দেখা যাচ্ছে -এএফপি
২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দেশটির সরকারি কারাগারে বন্দি অবস্থায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। ‘ইট ব্রেকস দ্য হিউম্যান : টর্চার, ডিজিস অ্যান্ড ডেথ ইন সিরিয়াস প্রিজন’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বন্দিদের পেটানো ও ধর্ষণের মতো নির্যাতনের অভিযোগও পাওয়া গেছে বলে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে। কারাগারে বন্দিদের ওপর এসব নির্যাতন থেকে রেহাই পাওয়া ৬৫ জনের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে এ তথ্য দিয়েছে অ্যামনেস্টি। ওই ৬৫ নির্যাতিত ব্যক্তি বন্দিশালায় মারধর ও যৌন নিপীড়নের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। হাতুড়ি ও বৈদ্যুতিক তার দিয়ে তাদের ওপর বেধড়ক পেটানো হতো বলেও এ বর্ণনায় উঠে এসেছে। সিরিয়ার কারাগারগুলোতে সাবেক এসব বন্দি ‘ওয়েলকাম পার্টি’ নামে পরিচিত। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের মার্চে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিরিয়ার কারাগারে ১৭ হাজার ৭২৩ জনের বেশি লোক মারা গেছে। এই হিসাব অনুযায়ী কারাগারগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ১০ বন্দির মৃত্যু হয়েছে, যা প্রতি মাসের হিসাবে দাঁড়ায় ৩০০ জন বা তারও বেশি।
কারাবন্দিদের ওপর এসব নির্যাতন বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি। বিশেষ করে সিরিয়া সমস্যা নিয়ে শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণকারী প্রভাবশালী দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রতি এই আবেদন জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। তবে সিরিয়ার সরকার বরাবর এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কারাগারগুলোতে ‘নিরাপত্তা তল্লাশির’ নামে পুরুষ গার্ডরা নারীবন্দিদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করে। জোর করতে চাইলে ধাতব বস্তু ও বৈদ্যুতিক তার দিয়েও নারীদের পেটাত কারারক্ষীরা। বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাওয়া সামির নামের সাবেক এক কারাবন্দি তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হতো। তারা চাইত, আমাদের সঙ্গে যতটা সম্ভব অমানবিক আচরণ করতে। আমি রক্ত দেখেছি, নদীর মতো। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি মনুষ্যত্ব এতটা নিচে নামতে পারে। যখন তখন কারাবন্দিদের হত্যা করতে তাদের (কারারক্ষী) কোনো সমস্যাই ছিল না। জিয়াদ নামের আরেকজন বলেন, তারা (কারারক্ষী) হত্যার পর মৃত ব্যক্তিদের লাথি মেরে দেখত, তাদের দেহে প্রাণ আছি কিনা। অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার পরিচালক ফিলিপ লুথার বলেন, সিরিয়ার সরকারি বাহিনী প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নির্যাতন করে আসছে। বহু বছর ধরেই এটা হয়ে আসছে। এটি এখন সরকারবিরোধী যে কোনো শক্তির ওপরই প্রয়োগ করা হয়। এটা বেসামরিক জনগণের ওপর পদ্ধতিগত ও ব্যাপকভিত্তিক আক্রমণে পরিণত হয়েছে। এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

No comments

Powered by Blogger.