‘সিরিয়ার লাখো শিশুর প্রতিনিধি ওমরান’

ছোট্ট শরীরের পুরোটা ধুলাবালুতে আচ্ছন্ন। ধূলি-ধূসর মাথাভর্তি চুলের মধ্য থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। সেই রক্ত মুখের ওপর এসে ধুলার সঙ্গে মিশে পেস্ট হয়ে গেছে। রক্তের ছোপ ছোপ দাগ শরীরের অন্যান্য অংশেও। বাঁ হাতটা তুলে প্রথমে তালুর পেছন দিকটা, পরে সামনের দিকটা মুখের ওপর বুলিয়ে আনল। এরপর হাতটা চোখের সামনে ধরতেই যেন একটু চমকে উঠল। তারপর চেয়ারে ঘষে হাতের রক্ত মুছে ফেলল। এত কিছুর পরও কেমন যেন শান্ত পাঁচ বছরের শিশু ওমরান দাকনিশ। কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি নেই। তবে পরিস্থিতির আকস্মিকতায় সে কিছুটা বিমূঢ়।এর একটু আগেই তাকে উদ্ধার করা হয় সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো শহরের একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে। এরপর তাকে এনে বসানো হয় কমলা রঙের অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি চেয়ারে। আলেপ্পোর কাতেরচি এলাকায় গত বুধবার বিমান হামলা চালায় সরকারি বাহিনী। ওই দিন সেখানে বিমান হামলায় একটি বাড়ি ধসে পড়ে।
তার ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করা লোকজনের মধ্যে ছিল কয়েকটি শিশু। ওমরানকে উদ্ধারের দৃশ্যটি ধারণ করেন স্থানীয় সাংবাদিক মুস্তফা আল-সারৌত। সরকার ও বিদ্রোহী—দুই পক্ষের লড়াইয়ে সিরিয়ার অধিবাসীরা যে অবর্ণনীয় কষ্টের মাঝে দিন যাপন করছে, তারই যেন প্রতীক হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই ভিডিও বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা ভাইরাল হয়ে উঠেছে। মুস্তফা আল-সারৌত বলেন, ‘আমি বহু শিশুকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করতে দেখেছি। কিন্তু এই নিষ্পাপ শিশুটিকে দেখার পর মনে হলো, যেন সে জানেই না একটু আগে তার সঙ্গে কী ঘটে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই শিশুদের ওপর প্রতিদিনই বোমা পড়ে। আজকের এই ঘটনা কোনো ব্যতিক্রম কিছু নয়। সিরিয়ার লাখো শিশুর প্রতিনিধি এই শিশু।’ গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর তুরস্কের উপকূলের সৈকতে পড়ে ছিল সিরীয় শরণার্থী শিশু আয়লান কুর্দির লাশ। যুদ্ধের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়া আয়লানের মৃতদেহের সেই ছবি বিশ্বজুড়ে ঝড় তোলে। আয়লানের পর ওমরান দাকনিশের এই ছবিকে অন্যতম মর্মস্পর্শী হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.