আশার কথাই শোনালেন ক্রুইফ

এসেই কাজে নেমে পড়লেন লোডভিক ডি ক্রুইফ।
তাঁর প্রথম সেশনে অনুশীলনে ব্যস্ত ফুটবলাররা।
কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে l প্রথম আলো
জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড গরমেও গায়ে ছিল নতুন ছাইরঙা পুলওভার। পায়ে নতুন কেনা কোপা ম্যান্ডেলা বুট। চেহারায় কোনো অস্বস্তির ছাপ নেই। কাল বিকেলে লোডভিক ডি ক্রুইফ যখন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ঢুকছিলেন, বেশ ফুরফুরেই দেখাচ্ছিল। লম্বা বিমানভ্রমণ শেষে গতকাল ভোরে পৌঁছেছেন ঢাকায়। বিকেলে অনুশীলনে এলেন জাতীয় দলের এক মাসের খণ্ডকালীন কোচ। সেই পুরোনো স্টেডিয়াম। সেই মাঠ। ক্যাম্পে থাকা ৩৪ ফুটবলারের বেশির ভাগই পুরোনো। শুধু নতুন একটা লক্ষ্য নিয়ে আবারও ডি ক্রুইফের বাংলাদেশে আসা। গত সেপ্টেম্বরের পর এই আট মাসে কয়েকজন কোচ বদলেও ব্যর্থতার বৃত্তেই দেশের ফুটবল। এখন হাতে সময় না থাকায় পুরোনো কোচ ক্রুইফেরই শরণ নিল বাফুফে। তাজিকিস্তানের সঙ্গে এশিয়ান কাপের প্লে অফ দুটির জন্যই তাঁকে আনা। ঢাকায় এসে নতুন করে পথচলা শুরু করতে চাইলেন, ‘বাফুফের পুনর্নির্বাচিত সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে প্রথমেই অভিনন্দন। তিনি নির্বাচিত হয়েছেন বলেই এখানে আসতে পেরেছি। গত কিছুদিন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফল নিয়ে কেউই গর্বিত হতে চাইবেন না। আসলে গত কয়েক মাস বাংলাদেশের ফুটবল সঠিক পথে ছিল না। আমি আবারও নতুন করে সব শুরু করতে চাই।’ তাজিকিস্তানের সঙ্গে ২ জুন দুশানবেতে প্রথম ম্যাচেই চ্যালেঞ্জটা বেশি ক্রুইফের, ‘সবাই জানে হোম ম্যাচে ঢাকায় তাজিকিস্তানের সঙ্গে আমরা কী ফল করেছিলাম (১-১)।
এখন দুশানবেতে ভালো করাও বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে সবাই অসন্তুষ্ট। আমি চাই বাংলাদেশের মানুষ খেলা দেখে খুশি হোক। জাতীয় দল নিয়ে গর্ব করুক।’ কাজটা কঠিন হবে না মনে করেন ক্রুইফ, ‘বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে ভালোই ধারণা রয়েছে আমার। সবাইকে মোটামুটি চিনি। মনে হয় না কোনো সমস্যা হবে।’ বারবার জাতীয় দলের কোচ বদলানোর বিপক্ষে ক্রুইফ। কাল সেটা বললেনও, ‘এটা কোনো সুস্থ ধারা নয়। দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ছাড়া কোনো কোচই স্থায়ী সাফল্য পান না। আমি মনে করি, ধারাবাহিকতা রক্ষা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ কোচদের নিয়োগ দেওয়ার আগে জীবনবৃত্তান্ত দেখার পক্ষে ক্রুইফ, ‘যখন একজন কোচকে নেওয়া হয়, তাঁর সিভিটাও যাচাই-বাছাই করা গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরে কোচ নেওয়ার বেলায় কেউ কোনো সিভি বাছাই করে দেখেনি।’ শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে দলের বাইরে থাকা ফুটবলারদের ফিরে পেয়ে খুশি কোচ। মামুনুলদের ফিরে আসা তাঁর কাছে ইতিবাচক, ‘সভাপতিকে প্রথম আলোচনাতেই বলেছিলাম, ভালো ফল পেতে দলে গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের আমার চাই। মামুনুল খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ও দলের অধিনায়ক। সতীর্থদের মানসিকতা সে বোঝে। আমার নির্দেশনাগুলো ভালোভাবে নিতে পারে। আমার চাওয়া সবাইকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়।’ তাজিকিস্তানের সঙ্গে অ্যাওয়ে ম্যাচের আগে মাত্র দুই সপ্তাহ সময় পাচ্ছেন কোচ। এই সময় কি যথেষ্ট? ক্রুইফ আশাবাদী, ‘আমি জানি, এটা খুবই অল্প সময়। কিন্তু এভাবেই কাজ করতে হবে। ছেলেরা কয়েক দিন আগে একটা টুর্নামেন্টে খেলেছে। জানি, সবাই ফিট আছে। তাই এ ব্যাপারে আমি চিন্তিত নই। অ্যাওয়ে ম্যাচটিতে অন্তত ড্র করতে চাই।’ কোচ তো শুধু পরিকল্পনাই করতে পারেন, মাঠে খেলতে হবে ফুটবলারদেরই। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলারদের বেশির ভাগই জাতীয় দলের প্রতি দায়বদ্ধ নন বলে অভিযোগ আছে। তাঁরা মন দিয়ে খেলেন না, এমন অভিযোগ সাম্প্রতিক সময়ে শোনা গেছে অনেকের মুখেই। শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যাপারটা তো আছেই। তাই ডি ক্রুইফ এসে পথহারা ফুটবলকে পথ দেখাবেন, এমনটা আশা করা বাড়াবাড়িই শোনাবে, যত দিন না ফুটবলাররা মাঠে সেরাটা দিতে নিজেদের উজাড় করে দেন।

No comments

Powered by Blogger.