ট্রেনের ভাড়াই বাড়ে, যাত্রীসেবা নড়ে না by নজরুল ইসলাম

ট্রেনের ভাড়া বাড়লেও যাত্রীসেবা আগের মতোই
দুই বছরের মধ্যে দুই দফা ভাড়া বাড়ানো হলেও যাত্রীসেবা বাড়েনি। আগের মতোই আছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব, টিকিট পেতে সমস্যা, কালোবাজার থেকে বেশি দামে টিকিট কেনা, অপর্যাপ্ত বিশ্রামাগার, ট্রেনের ভেতরের বাথরুম নোংরা, হকার ও ভিক্ষুকদের উৎপাতকে যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে ব্যত্যয় বলে মনে করছেন রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীরা। যাত্রীরা বলছেন, আগের তুলনায় ট্রেন সময়সূচি বেশি মানছে। ২০১২ সালে যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর কথা বলে ৫ থেকে ১১০ শতাংশ পর্যন্ত রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন রুটে ৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ বছর ভাড়া বেড়েছে ২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়মিত যাতায়াত করেন—এমন অর্ধশত যাত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল নতুন করে ভাড়া বাড়ানোর পর যাত্রীসেবার মান বেড়েছে কি না। উত্তরে যাত্রীরা বলেছেন, ভাড়া বাড়ার পর সেবার মানে উন্নতি হয়েছে বলে তাঁদের মনে হয়নি। সবকিছু আগের মতোই আছে। তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষÿযেসব ট্রেন (কর্ণফুলী, তিতাস, বলাকা, কমিউটার, মহুয়া ইত্যাদি) ব্যক্তিমালিকানায় ইজারা দিয়েছে, সেসব ট্রেনের যাত্রীরা সেবার ক্ষেত্রে মোটামুটি সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত ট্রেনের চেয়ে ওই ট্রেনগুলোর পরিবেশ নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন।  কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে যাত্রীদের কোনো অভিযোগ নেই। আমাদের সীমিত সম্পদে এই অধিক যাত্রীর পরিপূর্ণ সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের যতটুকু সম্ভব, ততটুকু করছি।’ কালোবাজারে টিকিটের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাউন্টারে যথেষ্ট টিকিট আছে এবং আমরা অনলাইনেও টিকিট কাটার ব্যবস্থা করেছি। এখন কেউ যদি কালোবাজারির কাছ থেকে টিকিট কেনে, তাহলে আমাদের কী করার আছে।’ কাজী রিফাত বেসরকারি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। যাচ্ছেন রাজশাহী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানোর পরও সেবার মান আগের মতোই। আর অনলাইনে টিকিট কাটতে কোনো ঝামেলা হয় কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বললেন, অনেকেই তো অনলাইন সম্পর্কে জানেন না। সিলেটগামী ট্রেনের যাত্রী মোরশেদ আলম, রুমানা আক্তার ও মো. হারুনুর রশিদের অভিযোগ, যে পরিমাণ লোক টিকিট কেটে ওঠে, তার ঠিক সমপরিমাণ লোক টিকিট ছাড়াই ওঠে। তার ওপর হকার ও ভিক্ষুকদের অতিরিক্ত চাপ। এসব কারণে টয়লেটে পর্যন্ত যাওয়া যায় না। হারুনুর রশিদ বললেন, টিকিট অ্যাটেন্ডার ও পুলিশ অনেক সময় যাত্রীদের বলে, টিকিট কাটা লাগবে না। এ কারণে অতিরিক্ত যাত্রী থাকে। ময়মনসিংহগামী ট্রেনের যাত্রী সামিউলসহ অনেকেই বললেন, কাউন্টারে গেলে বলে টিকিট নেই, কিন্তু যখন তাদের ১০-২০ টাকা বেশি দেওয়া হয়, তখন টিকিট দেন। এটা অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। তাঁদের অভিযোগ, এটা জেলা শহর থেকে ঢাকার আসার পথে কাউন্টারগুলোতে হয়। চট্টগ্রামগামী ট্রেনের যাত্রী কামার জেবিন বললেন, কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে কালোবাজার থেকে দুটি টিকিট করেন তিনি। এসি বার্থের দুটি টিকিটের দাম দুই হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু তাঁকে ৬০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়েছে। নীল রতন সরকার এসেছেন মোহনগঞ্জ থেকে। কমলাপুর নামার পর জানতে চাই তাঁর ট্রেন যথা সময়ে এসেছে কি না? তিনি বলেন, ট্রেন আসার কথা ছিল দুইটায়, ঢাকায় নামলাম সাড়ে তিনটায়। ট্রেন খুবই ধীরগতিতে চলছে। কমলাপুর রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মূল বিষয়গুলো দেখবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, তাঁরা শুধু আইনশৃঙ্খলার বিষয়গুলো দেখভাল করেন। তাঁর দাবি, তিন বছর আগে কমলাপুর স্টেশনের যে অবস্থা ছিল, এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে যাত্রীরা স্টেশনে নামলে তাদের মালামালের নিরাপত্তা ছিল খুবই কম। কিন্তু এখন যাত্রীরা নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারছে; দু-একটা ঘটনা ছাড়া। স্টেশনমাস্টার নিপেদ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ভাড়া বাড়ার সঙ্গে সেবার কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা সাধ্যমতো যাত্রীদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। নতুন নতুন কোচ আমদানি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ট্রেনের শিডিউল ঠিক থাকছে প্রায় ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে। আর বিনা টিকিটে যারা ওঠে, তাদের বিরুদ্ধে দ্বিগুণ জরিমানা করাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কোন রুটে কত টাকা ভাড়া বেড়েছে: ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে শোভন শ্রেণির ভাড়া ২৬৫ টাকা থেকে ২৮৫ টাকা করা হয়েছে। চেয়ার কোচ ৩৫৫ টাকা থেকে ৩৮০, এসি চেয়ার ৬১০ টাকা থেকে ৬৫৬, এসি সিট ৭৩০ টাকা থেকে ৭৯০, এসি বার্থে ১ হাজার ৯০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৯০ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা-খুলনা রুটে শোভন ৩৯০ টাকা থেকে ৪২০ টাকা, শোভন চেয়ার ৪৬৫ টাকা থেকে ৫০৫, এসি চেয়ার ৮৯০ টাকা থেকে ৯৬০, এসি সিট ১ হাজার ৭০ টাকা থেকে ১ হাজার ১৫৫ এবং এসি বার্থের ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭৩০ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা-রাজশাহী রুটে ভাড়া বাড়ানোর পর শোভন ২৮৫ টাকা, শোভন চেয়ার কোচ ৩৪০, এসি চেয়ার ৬৫৫, এসি সিট ৭৮০, এসি বার্থের ১ হাজার ৭০ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা-সিলেট রুটে শোভন ২৪০ টাকা, শোভন চেয়ার ৩২০, এসি চেয়ার ৬১০, এসি সিট ৭৩৫ এবং এসি বার্থে ১ হাজার ১০০ টাকা করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.