উপজেলা শহরে ভাষার উৎসব

নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি কলেজ মাঠে
গতকাল ভাষা প্রতিযোগে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের একাংশ
নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি কলেজে ভাষা প্রতিযোগের মঞ্চ। মঞ্চে উঠলেন উৎসবের সমন্বয়কারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিক মনজুর। জানালেন, ভাষা প্রতিযোগের দ্বাদশ আসরে এবারই প্রথম কোনো উপজেলা শহরে হচ্ছে এই উৎসব। এ ঘোষণায় আনন্দে আত্মহারা স্থানীয় লোকজন। সৈয়দপুরের এই কলেজে গতকাল শুক্রবার আয়োজন করা হয় এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগের। এতে রংপুর বিভাগের সাত জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সকাল সাড়ে নয়টায় প্রথম আলোর সৈয়দপুর বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকা ও ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। উদ্বোধনী পর্বে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে ৩৫ মিনিটের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর বাংলা বানান নিয়ে ছিল আরও একটি পরীক্ষা। দুটি পরীক্ষার পর শুরু হয় তারিক মনজুরের সঞ্চালনায় মজার প্রশ্নোত্তর পর্ব। এই পর্বে দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফসিন মোতমাইন্না হৃদির প্রশ্ন ছিল, ব্যঞ্জনবর্ণ স্বরবর্ণের সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হয় না। কিন্তু স্বরবর্ণ কেন ব্যঞ্জনবর্ণের সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হয়? জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশীদ বলেন, ‘যেহেতু স্বরবর্ণের উচ্চারণে বাতাস কোথাও বাধা পায় না, সেহেতু তা নিজেই উচ্চারিত হয়। অন্যের সাহায্য লাগে না।’ রংপুর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী প্রতীক ভাস্কর প্রশ্ন করে, রবীন্দ্র, নজরুল ও লালনের গানের বিকৃতি রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না। এই প্রশ্নে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ কাহালি বলেন, যন্ত্রের আধিপত্য এবং সাধনা ছাড়া গান গাওয়ায় এসব গানের বিকৃতি ঘটছে। বিকৃতি রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের আরও জবাব দেন অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর, সহকারী অধ্যাপক তারিক মনজুর ও ড্যাফোডিল ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক বিনয় বর্মণ। প্রশ্নোত্তর পর্বের মাঝে রংপুরের দ্য মিলেনিয়াম স্টার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের খুদে শিক্ষার্থী আনান শাইয়ারার পরিবেশন করা ছড়া ‘আমি হব সকাল বেলার পাখি’, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদের কণ্ঠে কবিতা ‘বনলতা সেন’ ও দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভেরনিক রোজারিওর গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত ‘তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী’ সবাইকে মুগ্ধ করে। এই পর্বের মাঝে বক্তব্য দেন পাখি নিয়ে বই লিখে বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক শরীফ খান। তিনি বলেন, ‘পাখিদের কোনো আঞ্চলিক ভাষা নাই। তারা অঙ্ক জানে। পাখির বাচ্চারা কখনো বাবা-মায়ের অবাধ্য হয় না। পাখিরা কখনো অপরিচ্ছন্ন থাকে না।’ প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে বানান পরীক্ষায় বিজয়ী আটজনকে নিয়ে আরেকটি বানান প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় রংপুর জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত হাসান, দ্বিতীয় সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. নুরুন্নবী ইসলাম ও তৃতীয় রংপুর জিলা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মুয়াযবিন সুলতান। উৎসবে দ্বিতীয় পর্বে গান শোনান ক্লোজআপ ওয়ানের তারকা রাশেদ। এরপর প্রথমা প্রকাশনের প্রধান সমন্বয়কারী জাফর আহমদ অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সৈয়দপুর প্রতিনিধি এম আর আলম। উৎসবের শেষ পর্বে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—এই চার বিভাগে ১৫ জন করে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। সেরাদের সেরা হয় রংপুর জিলা স্কুলের অষ্টম শ্রেণির নাজিম আল মুক্তাকিম। বিজয়ী ৬০ শিক্ষার্থী ঢাকায় জাতীয় উৎসবে অংশ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.