মুখোমুখি হতে চান ট্রাম্প ও ক্রুজ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির দুই শীর্ষ মনোনয়ন-প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও টেড ক্রুজ দলের অন্য প্রার্থীদের সরে গিয়ে তাঁদের দুজনের মুখোমুখি লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন। শনিবার অনুষ্ঠিত প্রাইমারি বা বাছাইপর্বের কথিত ‘সুপার স্যাটারডের’ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ট্রাম্প ও ক্রুজ উভয়েই দুটি করে অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছেন। এর ফল প্রকাশের পরই এ দুই মনোনয়ন-প্রত্যাশী দুজনের সরাসরি লড়াইয়ের কথা বলেন। শনিবার রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা মোট পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে ভোটের সম্মুখীন হন। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স দুটি ও হিলারি ক্লিনটন একটি রাজ্যে জয়লাভ করেছেন। এই নির্বাচনী ফলাফলে স্যান্ডার্স নিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে নতুন রসদ সংগ্রহ করলেও ডেলিগেটের হিসাবে হিলারি ক্রমে তাঁর ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন। কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের ককাস ও লুইজিয়ানায় প্রাইমারিতে জেতার পর ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি টেড ক্রুজের সঙ্গে একক ভিত্তিতে মুখোমুখি লড়তে চাই।’ টেড ক্রুজও মত দেন, মার্কো রুবিও ও জন কেইসিকের মতো প্রার্থীদের এখন সরে যাওয়া উচিত। ডেলিগেটের সংখ্যার হিসাবে পিছিয়ে থাকলেও ক্রুজ দাবি করেছেন, সমর্থনের জোয়ার এখন তাঁর পক্ষে। কোনো সন্দেহ নেই, কানসাস ও মেইন অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত শনিবারের ককাসে টেড ক্রুজের বিজয় তাঁকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে রিপাবলিকান নেতৃত্ব কোনো রাখঢাক ছাড়াই তাঁদের সব শক্তি ও অর্থ নিয়োগ করেছিলেন ফ্লোরিডার সিনেটর মার্কো রুবিওর পেছনে। কিন্তু রুবিও শনিবারের প্রতিটি নির্বাচনেই বড়জোর তৃতীয় স্থান দখল করতে সক্ষম হন। তাঁর চেয়েও খারাপ ফল করেছেন ওহাইওর গভর্নর জন কেইসিক, যিনি এই চার রাজ্যেই নামমাত্র ভোট পেয়েছেন।
মোট ডেলিগেটের হিসাবে এই চারজনের সর্বশেষ অবস্থান হচ্ছে ট্রাম্প ৩৭৫, ক্রুজ ২৯১, রুবিও ১২৩ ও কেইসিক ৩৪। নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ামাত্রই ক্রুজ নিজেকে রিপাবলিকান পার্টির ‘হিলারিকে হারাতে সক্ষম’ এমন একমাত্র প্রার্থী হিসেবে দাবি করে দলের সমর্থকদের তাঁর নেতৃত্বে ট্রাম্পের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে এক হতে আহ্বান জানান। রিপাবলিকান নেতৃত্ব গত কয়েক দিন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রবল সমালোচনার ঝড় তোলা সত্ত্বেও লুইজিয়ানা ও কেন্টাকিতে তাঁর বিজয় প্রমাণ করে প্রতিষ্ঠানবিরোধী রিপাবলিকান সমর্থকদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখনো অটুট। এই দুই রাজ্যে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, দলের শীর্ষ কিছু নেতা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আহ্বান করে বরং তাঁদের ক্রোধের কারণ হয়েছেন। লক্ষণীয়, যে দুটি রাজ্যে ক্রুজ জিতেছেন এবং ট্রাম্প হেরেছেন, সেখানে আনুষ্ঠানিক প্রাইমারি ভোট গ্রহণের বদলে অনেক সীমিত লোকের অংশগ্রহণে ‘ককাস’ অনুষ্ঠিত হয়। ক্রুজ গোড়া থেকেই এই দুই রাজ্যে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালান ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অর্থ ব্যয় করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প ককাসে অংশ নেওয়ার বদলে লুইজিয়ানা প্রাইমারিতে অধিক ডেলিগেট সংগ্রহ সম্ভব, এই বিবেচনা থেকে সেখানে সময় ও অর্থ ব্যয় করেন। এই দুই রাজ্যে শুধু রিপাবলিকান ছাড়া অন্য দলভুক্ত বা নির্দলীয় ভোটাররা অংশ নিতে পারেন। ট্রাম্পের বিজয়ের পেছনে সে বিষয়টিও বিশেষ ভূমিকা রাখে। ডেমোক্রেটিক পার্টিতেও বার্নি স্যান্ডার্স তাঁর সব শক্তি নিয়োগ করেন নেব্রাস্কা ও কানসাস অঙ্গরাজ্যের ককাসে। এই দুটি অঙ্গরাজ্যই শ্বেতাঙ্গপ্রধান। অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গ সমর্থকদের জোরে হিলারি ক্লিনটন অনায়াসে লুইজিয়ানায় বড় ধরনের বিজয় অর্জন করেন। এই ফলাফল থেকে আবারও প্রমাণিত হলো যে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে নিজের সমর্থন বাড়াতে সক্ষম না হলে অবশিষ্ট নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বার্নি স্যান্ডার্স অর্থপূর্ণ লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন না।

No comments

Powered by Blogger.