সাংবাদিক দম্পতি হত্যা- রহস্য উদ্ঘাটন হবে না?

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার-মেহেরুন রুনি
হত্যাকান্ডের ৪৮ ঘণ্টা থেকে ৪৮ মাস। ফলাফল শূন্য
পেরিয়ে গেল ৪৮ মাস, তবু মেহেরুন রুনি ও সাগর সরওয়ারের হত্যারহস্য উন্মোচিত হলো না। অথচ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, তিনি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন, চার বছরের মাথায়, সাগর সরওয়ারের মা হতাশার সঙ্গে বলছেন, ‘দেখো, ৪৮ বছরেও কিছু বের হয় কি না!’ এই হতাশা আমাদের সবার। কিন্তু এ শুধু হতাশা নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে জাতির ক্ষোভ আর আইন প্রয়োগকারীদের ব্যর্থতার গ্লানি। অবশ্য আমরা জানি না, এই গ্লানি আইন প্রয়োগকারীরা অনুভব করেন কি না; খোদ সরকারের এ ব্যাপারে কোনো দায়বোধ আছে কি না।
সাংবাদিক দম্পতি মেহেরুন রুনি ও সাগর সরওয়ার দুটি পৃথক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কর্মী থাকা অবস্থায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে রাজধানী ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের একটি ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দুই মাস ধরে ‘তদন্ত’ চালানোর পর ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টকে নিজেদের ব্যর্থতার কথা জানায়, যা আরও এক রহস্যের জন্ম দেয়। তারপর হাইকোর্টের নির্দেশে এই হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব কবর থেকে দুজনের লাশ তুলে নিয়মমাফিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে; নিহত দম্পতির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণাগারে পাঠায়, ইত্যাদি নানা কিছু করে। কিন্তু সবকিছুর ফলাফল এ পর্যন্ত শূন্য।
বাস্তবে অস্তিত্বমান দুজন মানুষ সাগর ও রুনি একটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানকালে ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে খুন হয়েছেন—এই তথ্য যদি বাস্তব সত্য হয়, তাহলে কারা তাঁদের খুন করেছেন, সে রহস্য উন্মোচন করা হচ্ছে না কেন? কোনো অশরীরী আত্মা কি আকাশ থেকে নেমে এসে তাঁদের হত্যা করে আকাশেই ফিরে গেছে? নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে?
বিষয়টি শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নয়, সরকারেরও। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে সম্ভবত সর্বাধিক আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও খুনিদের বিচার করার দায়িত্ব এড়িয়ে থাকা উচিত নয়।

No comments

Powered by Blogger.