মিউনিখে সিরিয়া নিয়ে বৈঠক কার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন- যুদ্ধবিরতিতে সম্মত বিশ্ব

সিরিয়ায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলা রক্তপাত বন্ধে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো। যুদ্ধবিরতির এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে এক সপ্তাহের মধ্যে একটি চুক্তি সইয়ের কথা রয়েছে। খবর বিবিসি ও এএফপির।
জার্মানির মিউনিখে গত বৃহস্পতিবার ১৭ জাতির ‘আন্তর্জাতিক সিরিয়া সমর্থক গ্রুপ (আইএসএসজি)’-এর এক বৈঠকে এ সম্মতি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এ যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল-কায়েদার সহযোগী আল-নুসরা ফ্রন্টের জন্য কার্যকর হবে না। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স সিরিয়ার বিবদমান গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সলাপরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করবে বলেও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও সিরিয়াবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্তেফান দ্য মিস্তুরা ওই সম্মতির কথা ঘোষণা করেন। বৈঠকে প্রতিনিধিরা সিরিয়ায় ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার ও সম্প্রসারিত করা এবং অবরুদ্ধ শহরগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়েও একমত হন।
এদিকে দীর্ঘ সময় ও বহু রক্তপাতের পর যুদ্ধবিরতির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো একমত হলেও এটি কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকেরা। এ প্রসঙ্গে জন কেরি বলেই ফেলেছেন, যুদ্ধবিরতির এ পরিকল্পনা বেশ উচ্চাভিলাষী। বিভিন্ন পক্ষ একে কতটা সম্মান করে, সেটাই হবে এর আসল পরীক্ষা।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জন কেরি ও সের্গেই লাভরভ উভয় নেতা স্বীকার করেন, এই মুহূর্তে এটা কেবল কাগজে-কলমে অগ্রগতি। আর কিছু কূটনীতিক এরই মধ্যে বলেছেন, ‘কাগজে ছাপা হওয়ার বাইরে এই সম্মতি বা পরিকল্পনার কোনো মূল্য নেই।’
বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলো এমন একসময়ে ওই যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্মত হলো, যখন রাশিয়ার বিমান হামলার সহায়তায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনী সিরিয়ার বৃহত্তম শহর আলেপ্পোর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শহরটি বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে।
আলেপ্পোতে আটকে পড়ে রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। তাদের সহায়তায় দ্রুত এগিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকারবিরোধীরা। সরকারি বাহিনীর এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে শহরটির অবরুদ্ধ বাসিন্দাদের পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে সম্মতির ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট আসাদের সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও বিদ্রোহীদের একটি প্রধান জোট একে স্বাগত জানিয়েছে। বিদ্রোহীদের মুখপাত্র সেলিম আল-মুসলাত বলেন, ‘সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রতিফলন দেখলে আমরা শিগগিরই জেনেভা আলোচনায় অংশ নেব।’ সিরিয়া সরকার ও বিদ্রোহীদের শান্তি আলোচনার টেবিলে বসাতে এ শহরে শান্তি বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চালাচ্ছে জাতিসংঘ।
ওদিকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেছেন, যুদ্ধবিরতি তখনই শুধু কার্যকর হবে, যখন রাশিয়া সিরিয়ায় বোমা হামলা থামাবে। তবে লাভরভ বলেন, তাঁদের অভিযান চলবে।
প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর আগে সিরিয়ায় সংঘাতের শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো অনেক চেষ্টাও করেছে। কিন্তু এই যুদ্ধে আসাদের পক্ষে রাশিয়া যুক্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত বদলে এক সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধে পড়ে দেশটি। রাশিয়া বলছে, আইএসকে লক্ষ্য করে তাদের বিমান হামলা চলছে। কিন্তু পশ্চিমাদের অভিযোগ, আইএস নয়, বরং প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধীদের লক্ষ্য করেই বিমান হামলা চালাচ্ছে দেশটি।
সিরিয়ায় এ যুদ্ধে নিহত হয়েছে আড়াই লাখের বেশি মানুষ। বাস্তুচ্যুত ১ কোটি ৩৫ লাখ। তবে সম্প্রতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সিরিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের’ প্রতিবেদনে নিহত মানুষের সংখ্যা বলা হয় ৪ লাখ ৭০ হাজার, যা ওই পরিসংখ্যানের প্রায় দ্বিগুণ। ইতিমধ্যে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে সিরিয়া থেকে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে হাজার হাজার শরণার্থী।

No comments

Powered by Blogger.