পিটুনি খেয়ে আবারো পালিয়ে গেল ‘আসল বিএনপি’

নয়া পল্টনে সংঘর্ষের পর একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে।
রোববার ৩.৪৫-এর দিকে এই ঘটনা ঘটে।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করতে এসে আবারো ধাওয়া ও মারধর খেয়ে পালিয়ে গেছে ‘আসল বিএনপি’ নামধারী কামরুল হাসান নাসিমের সমর্থকরা। আজ রোববার বিকেলে নাসিমের শতাধিক সমর্থক গানবাদ্য বাজিয়ে কার্যালয় অভিমুখে আসতে চাইলে অপেক্ষমান বিএনপির কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। কিছু সময়ের জন্য বেধে যায় সংঘর্ষ। পুড়িয়ে দেয়া হয় নাসিম সমর্থকদের একটি পিকআপ। প্রায় আধাঘণ্টা পর পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ঘটনার পরপর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেনন, বস্তির কিছু টোকাই দিয়ে সরকার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা সরকারকে সাবধান করে দিচ্ছি, আপনারা যদি এ ধরণের কাজ অব্যাহত রাখেন, তাহলে জনগণের শাস্তি ভয়ঙ্কর হবে।
বছরখানেক ধরে বিএনপির বিরুদ্ধে ‘বিপ্লব’ ঘটানোর হুমকি দিয়ে আসছেন ‘আসল বিএনপি’র প্রধান নেতা কামরুল হাসান নাসিম। গত ২ জানুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করতে এসেছিল তার সমর্থকরা। ব্যাপক পিটুনি ও ধাওয়া খেয়ে সেদিন পালিয়ে গিয়েছিল তারা। কিন্তু নাসিম আবারো নয়া পল্টনে আসার হুমকি দিতে থাকেন।
বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ‘জাতীয়তাবাদি জনতার মঞ্চ’ বসানোর ঘোষণা দিয়ে আবারো আজ বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বিজয় নগর মোড়ে ‘আসল বিএনপি’র শতাধিক নেতাকর্মী জড়ো হয়। এরপর সাড়ে ৩টার দিকে তারা কার্যালয় অভিমুখে রওয়ানা হয়। তাদের সাথে ছিল একটি নীল রঙের পিকআপ। যেখানে বড় সাউন্ড স্পিকারে বিএনপির দলীয় সঙ্গীত প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ’ গান বাজছিল। পিকআপের সামনে ‘দলীয় বিপ্লবের মহড়া’ শীর্ষক একটি ব্যানারও টানানো ছিলো। নাসিমের সমর্থকরা কার্যালয়ের ৩০০ গজ দূরে আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগে প্রস্তুত ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের শতাধিক নেতা-কর্মী লাঠিসোটা হাতে তাদের ধাওয়া দেয়। মিনিট ১৫ সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। বিএনপির কর্মীরা আসল বিএনপির বেশ কিছু সমর্থকদের ধরে বেধড়ক পিটুনি দেয়। এক পর্যায়ে তারা ‘আসল বিএনপি’র কর্মীদের পিকআপটিতে (ঢাকা মেট্রো ন-১১-৯৩৭১) ভাঙচুর চালিয়ে তিনটি সাউন্ড বক্সসহ আগুন ধরিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণের মাথায় দিকবিদিক হারিয়ে আশপাশের গলি দিয়ে পালিয়ে যায় নাসিম সমর্থকরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ। এ ঘটনায় নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনের সড়কে প্রায় এক ঘণ্টা গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে।
এ ঘটনার পর বিকেল ৫টায় নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কিছুদিন আগেও পার্টি অফিস হামলা করার জন্য কিছু নিকৃষ্ট, অপকৃষ্ট, টোকাই দিয়ে আরেকটি বিএনপি নাম সাজিয়ে কয়েকজন লোকজন পাঠিয়েছিলো। আজকেও পার্টির অফিস দখল করা, আক্রমণ করা হবে- এ ধরণের কথা-বার্তা আমরা শুনছিলাম। বিকেলে আমাদের অফিসের দিকে তারা ধাবিত হয়ে আসছিলো।
নয়া পল্টনে সংঘর্ষের পর একটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে।
রোববার ৩.৪৫-এর দিকে এই ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, সরকার তার গোয়েন্দাদেরকে দিয়ে পাড়া-মহল্লা থেকে টোকাইদের দিয়ে পার্টি অফিসের সামনে দিয়ে একটা মিছিল করলে মনে হয় মানুষ এটা বিশ্বাস করবে। এটি এই সরকারের একটি হীন কৌশল, হীন অপকর্ম।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রিজভী বলেন, আমরা সরকারকে সাবধান করে দিচ্ছি, আপনারা যদি এ ধরণের কাজ অব্যাহত রাখেন, তাহলে জনগণের শাস্তি ভয়ঙ্কর হবে। জনগণের বিচার হচ্ছে ভয়ঙ্ককরতম বিচার। সেই বিচারের একদিন যে রায় হবে, সেই রায়ে আপনারা মাজা সোজা করে দাঁড়াতে পারবেন না।
রিজভী বলেন, একদিকে সরকার সারাদেশের নেতা-কর্মীদের মামলা দিয়ে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে। কারা নির্যাতন ভোগ করাচ্ছে এবং হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে বাড়ি ছাড়া করেছে। অন্যদিকে তারা (সরকার) স্বস্তি ও শান্তিপূর্ণভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বাঁধাগ্রস্ত করার জন্য একের পর এক নাটক করছেন, ষড়যন্ত্র করছেন।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপি চীনা মাটির বাসন নয় কিংবা মেলামাইনের থালা নয় যে ফেলে দিলে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। এটা ইস্পাত কঠিন ঐক্যের জাতীয়তাবাদী শক্তির রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এর নেত্রী হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। যিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী ইকবালুর রহমান রোকন, মৎস্যজীবী দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাব প্রমূখ।

No comments

Powered by Blogger.