এআইআইবির যাত্রা শুরু- ঋণ মিলবে অবকাঠামো খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে

চীনা প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং (মাঝে) গতকাল
বেইজিংয়ে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের
(এআইআইবি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি ভাস্কর্যের
মোড়ক উন্মোচন করেন l এএফপি
চীনের নেতৃত্বাধীন এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক বা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। আর এর মাধ্যমে শুরু হলো বিশ্বে আরও একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-সহযোগী বা ঋণ দাতা সংস্থার কার্যক্রম।
রাজধানী বেইজিংয়ে গতকাল শনিবার ব্যাংকটির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং, এআইআইবির প্রেসিডেন্ট চীনের সাবেক অর্থমন্ত্রী জিন লিকুয়ান, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ এআইআইবির সদস্যদেশগুলোর অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) মতো এআইআইবি থেকেও বাংলাদেশসহ ৫৭টি সদস্যদেশ এখন ঋণ নিতে পারবে। এআইআইবি অবশ্য ঋণ দেবে শুধু অবকাঠামো খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার মূলধনের এই ব্যাংকে বাংলাদেশের অংশ ৭০ কোটি ডলার (ডলার ৭৮ টাকা হিসাবে ৫ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা)।
রয়টার্স জানায়, ওয়াশিংটন না চাইলেও অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ কোরিয়া এআইআইবিতে যোগ দিচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আরও একটি উন্নয়ন-সহযোগী সংস্থা পাওয়া গেল, এটাই হলো আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য লাভ। এ ছাড়া এতে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রটি আরও প্রসারিত হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র তো চায়নি এআইআইবি গঠিত হোক—এমন প্রসঙ্গে আহসান মনসুর বলেন, ‘তা যুক্তরাষ্ট্র চায়নি। তারপরও এআইআইবি গঠিত হয়েছে। কারণ, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সত্যিই অবকাঠামো উন্নয়নে এশিয়ার বিপুল অর্থের দরকার। আর এআইআইবি এশিয়ার অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে “সাশ্রয়ী দাম, উৎকৃষ্ট মান” দর্শনকে বিবেচনায় রেখে।’
বছরে (প্রথম পাঁচ থেকে ছয় বছর) এক হাজার থেকে দেড় হাজার কোটি ডলার ঋণ দেবে এআইআইবি। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট লি কেছিয়াং বলেন, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে এশিয়াকে সবচেয়ে গতিশীল অঞ্চলে পরিণত করতে হলে এই অঞ্চলের অবকাঠামো ও কানেকটিভিটির জন্য বিনিয়োগ দরকার। সেই দরকারের একটা অংশই জোগান দেবে এআইআইবি।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পাশাপাশি এআইআইবি গঠনকে চীনের একটি কূটনৈতিক বিজয় বলে মনে করা হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লুক্সেমবার্গের অর্থমন্ত্রী পিয়েরে গ্রামেগনা বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার আরও একটি প্রমাণ এআইআইবি গঠন।’
এআইআইবি গঠিত হয় ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর। এরপর গত জুনে বাংলাদেশসহ সদস্যদেশগুলো এআইআইবির সঙ্গে চুক্তি সই করে।
এআইআইবিতে চীনের পর প্রভাবশালী সদস্য হচ্ছে ভারত ও রাশিয়া। মোট মূলধনে সর্বোচ্চ ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ চীনের, যা বাংলাদেশের আড়াই লাখ কোটি টাকারও বেশি। এরপর ভারতের ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং রাশিয়ার ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। পাকিস্তানের রয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।
তবে এআইআইবির সদস্য ৩০টি দেশের মধ্যেই রয়েছে মোট মূলধনের ৯৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ পূরণ এখনো বাকি। শেয়ারের পরিমাণ অনুযায়ী ভারত এআইআইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ পাবে বলে আশা করছে।

No comments

Powered by Blogger.