ইরানের সামনে পাহাড় সমান বাধা

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে ১৩ বছরের সংকটের পর বিশ্বের নিরাপত্তাবিষয়ক মাথাব্যথা কমেছে। জাতিসংঘের পরমাণু ওয়াচ ডগ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে, গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত পরমাণু চুক্তির আলোকে ইরান তার বাধ্যবাধকতা পূরণ করেছে। দেশটি তার ১৪ হাজার পরমাণু সেন্ট্রিফিউজ (মোট সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশ) অকেজো করেছে এবং সেগুলো আইএইএ’র তত্ত্বাবধানে বন্ধ করে দিয়েছে। সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ৯৮ শতাংশই বাইরে হস্তান্তর করেছে। এছাড়া তেহরান তার আরাক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রও (প্লুটোনিয়ামের প্রধান উৎস) আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে আনা হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট অবিশ্বাস্য দ্রুততায় এগুলো বাস্তবায়ন করেছেন। যেগুলো থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যেই পারমাণবিক বোমা বানাতে পারত ইরান। কিন্তু এখন এক বছরেও আর তৈরি করতে সক্ষম হবে না। ইরান পরমাণু ক্ষমতাধর হলে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের যে উত্তেজনা ছড়াতে পারত তা থেকে আপাতত নিশ্চিন্ত হচ্ছে বিশ্ব। এত কিছু করে ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে চেয়েছেন দেশটির নেতারা। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে অবরোধ তুলে নেয়ার ঘোষণাও এসেছে। কিন্তু সব বাধা কি এখানেই শেষ হয়ে যাবে? রোববার গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অবরোধ উঠলেও পরামাণু সংশ্লিষ্টতাহীন অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত অবরোধ উঠছে না। ইরানের সামরিক বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন ও পরীক্ষা থেকে নিবৃত হচ্ছে না। এটাকে জাতিসংঘ রেজ্যুলেশনের লংঘন বলে সমালোচনা করে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব। কিছুদিন আগে ইরানের ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষাকে সরাসরি পরমাণুচুক্তির বিরোধী বলেও আক্রমণ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে রিপাবলিকান আধিপত্য থাকায় প্রয়োজনমতো সুবিধা পাবে না ইরান। আগামীতে রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় এলে এই চুক্তি বাতিলেরও হুমকি দিয়েছিল। সম্প্র্রতি এক কংগ্রেসের এক আইনে বলা হয়েছে, ইরানের কাউকে মার্কিন ভিসা পেতে হলে তৃতীয় একটি দেশের নাগরিকের সুপারিশ লাগবে, যার তেহরান সফরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এমনকি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কেও নানা নজরদারি থাকবে। অন্যদিকে ইরানে এই চুক্তিকে নতুন অধ্যায় অভিহিত করে প্রেসিডেন্ট রুহানিকে ‘সফল রাজনীতিবিদ’ তকমা দেয়া হচ্ছে। তবে ফেব্র“য়ারির পার্লামেন্ট নির্বাচনে রুহানির বিরোধিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারে। আবার রুহানি থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান ক্ষমতায় এসে চুক্তির বিরোধিতা করলে চাপের মুখে পড়বে ইরান সরকার। ‘এখন কী হল’ প্রশ্ন তুলে ক্ষুব্ধ হবে ইরানিরা। সম্প্রতি বিরোধী মত ঠেকাতে ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল (১২ সদস্যবিশিষ্ট সিনিয়র শরিয়া কমিটি) দুই তৃতীয়াংশ মজলিস (পার্লামেন্ট) প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। ২০১৩ সালে ক্ষমতায় আসা রুহানি ২০১৭ সালে নির্বাচনের মুখোমুখি হবেন। এই মুহূর্তে ইরানের লাভ হচ্ছে অবরোধ উঠে যাওয়ার ফলে দেশটি এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেল বিক্রিতে সক্ষম হবে। দেশটির পুরনো এয়ারলাইনারগুলো আপডেট করতে পারবে। প্রতিরক্ষা খাতে ইরানের বিমানবাহী রণতরীগুলো একেবারেই পুরনো যা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেগুলো আপডেট করাসহ অনেক যুদ্ধবিমান কিনতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে দেশটি তার বিদেশে জব্দ ৩ হাজার কোটি ডলার ফেরত পাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের ৭ কোটি ৯০ লাখ জনগণ এখন সুদিনের অপেক্ষা করছেন। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতটা হবে এবং কত তাড়াতাড়ি হবে- তার ওপর নির্ভর করছে পরমাণু চুক্তির সফলতা।

No comments

Powered by Blogger.