মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তার কক্ষ তছনছ করলেন উপমন্ত্রী! by রোজিনা ইসলাম

যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের বিরুদ্ধে তাঁর মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের কক্ষে ভাঙচুর এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের ব্যানারে উপমন্ত্রীর নাম না থাকায় তিনি এটা করেছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানানো হয়েছে। উপমন্ত্রী অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত যুব দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকতে না পারায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করা হয়। গতকালের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বীরেন শিকদারসহ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল ও মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালে অনুষ্ঠান মঞ্চের পেছনে রাখা ব্যানারে নিজের নাম না দেখে ক্ষুব্ধ হন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী। তিনি একাধিকবার অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যেতেও উদ্যত হন। মন্ত্রণালয়ের সচিব নূর মোহাম্মদ উপমন্ত্রীকে নিবৃত্ত করেন। শেষ পর্যন্ত যুব পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণার আগে উপমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যান।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দুপুরে অনুষ্ঠান শেষ না হতেই উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় মন্ত্রণালয়ে ফিরে এসে যুগ্ম সচিব (যুব) মাশুক মিয়ার কক্ষে গিয়ে তাঁর কম্পিউটার ও টেলিফোন টেবিল থেকে ফেলে দেন। মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব গোলাম কবিরের কক্ষেও তালা লাগিয়ে দেন তিনি।
জানতে চাইলে সচিব নূর মোহাম্মদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, একজন যুগ্ম সচিব যদি অফিসে দেখেন তাঁর কক্ষের কম্পিউটার থেকে শুরু করে সবকিছু মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ভেঙে ফেলেছেন, কোনো কর্মকর্তা যদি দেখেন তাঁর কক্ষে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন, তাহলে তাঁরা কী করে অফিস করবেন? এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে গেছেন। এ ধরনের ঘটনা এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর একটা সমাধান দরকার।
সচিব বলেন, ‘আমার কাছে ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা এসেছিলেন। আমি বিষয়টি নিয়মানুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
দুপুরে আরিফ খান জয়ের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার রুম থেকে অন্য রুমে গিয়ে কীভাবে কম্পিউটার ভাঙব? পুরো ঘটনাটাই বানানো।’
উপমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের একটি অশুভ চক্র এই মন্ত্রণালয়ের সফলতা দেখে এসব বাজে প্রচারণা চালাচ্ছে। সেভাবেই আপনি এমন তথ্য পেয়েছেন। যেমন কয়েক দিন আগে আমি বিদেশ থেকে এসে শুনেছি, আমি নাকি মানব পাচার করেছি।’ উপমন্ত্রী বলেন, ‘এ মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মকর্তা বিএনপি-জামায়াতের হয়ে কাজ করেন। আমি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি।’
গতকাল বেলা সাড়ে তিনটায় যুগ্ম সচিব (যুব) মাশুক মিয়ার কক্ষে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি সহকারী সচিব গোলাম কবিরকেও। মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারা বলেন, দীর্ঘ চাকরিজীবনে কোনো কর্মকর্তাকে কোনো মন্ত্রী দ্বারা এভাবে অপমানিত হতে দেখেননি। ওই দুই কর্মকর্তা ক্ষোভে-দুঃখে অফিস থেকে বের হয়ে গেছেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। তবে যা ঘটেছে, তা তো মন্ত্রণালয়ের সবাই দেখেছে। বিষয়টি সাংঘাতিক। এসব একদম ঠিক হয়নি।’

No comments

Powered by Blogger.