ফ্রিল্যান্সিংয়ে মাসে আয় ২৪০০০ ডলার

এশিয়ায় ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইনে এ সম্প্রদায় এখন অন্য দেশের তুলনায় সংখ্যাগুরু। নিয়মিত চাকরি করে যে অর্থ আয় করা যায় তাদের অনেকেই তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্থ আয় করছেন ফ্রিল্যান্সিং করে। তাদেরই একজন পাকিস্তানের দানিয়েল সালিম। কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে তিনি এখন অনলাইনে এক পরিচিত মুখ। অনলাইনে গ্রাফিক ডিজাইন করে তিনি মাসে আয় করেন গড়ে ২০ হাজার ডলার। গত কয়েক মাস ধরে তার আয় এমনই। দানিয়েল বলেছেন, এই সফলতা রাতারাতি তার কাছে ধরা দেয় নি। তিনি বলেন, ২০১২ সালে আমার এক নিকট আত্মীয় আমাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে পরিচিত করায়। কিন্তু শুরুতে ক্লায়েন্টরা খুব কম পারিশ্রমিক দিতো। ওই সময় আমি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলাম। এক পর্যায়ে দেখি চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা। তাই আমি সেই প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ২০১৩ সালের মে মাসে তিনি চূড়ান্তভাবে ফ্রিল্যান্সিং প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। এ সংক্রান্ত অনেক সাইটের মধ্যে একটিতে তিনি সাইন ইন করেন। সেখানে ছোটখাটো কাজ দেয়া হয়। যেমন একটি লোগোর ডিজাইন অথবা একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে দেয়া। এরই মধ্যে কলেজের শিক্ষার খরচ চালিয়ে নিতে তিনি শুরু করে দেন একটি ছোটখাট ব্যবসা। সিদ্ধান্ত নেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে দুই বা তিন মাস দেখবেন যদি সফলতা না পান তাহলে ব্যবসায় ফিরবেন। প্রথম মাসে তিনি ফিভার (Fiverr)-এর সঙ্গে কাজ করেন। এখানে বেশির ভাগই লোগো ডিজাইনের কাজ। তবে এ কাজটি খুব সহজ ছিল না। দু’তিন সপ্তাহ তিনি কোন ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কোন সাড়া পেলেন না। দানিয়েল বলেন, আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম কি করলে সাড়া পাওয়া যাবে। তাই আমি ব্লগ পড়া শুরু করলাম। ফোরামে যোগ দিলাম। যারা সফল ফ্রিল্যান্সার তাদের কাজের ধারা বিশ্লেষণ করলাম। দেখলাম এটা এক কঠিন লড়াই। তবে তাই বলে আমাকে এ কাজ ছেড়ে দিলে চলবে না। তিনি বুঝলেন কোন ক্লায়েন্ট সহজে কোন নতুন ফ্রিল্যান্সারকে কাজ দিতে চায় না। কারণ সেখানে বিশ্বাসের বিষয় রয়েছে। তারা চায় পেশাদার। প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সার। এক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সারের জীবনী থাকতে হয় বর্ণিল, শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তেমন করে তিনি  প্রোফাইল আপডেট করলেন। আস্তে আস্তে কাজ আসা শুরু হলো। কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে প্রতি মাসে তিনি এক প্রজেক্ট হাতে পাওয়া শুরু করলেন। পেশাগত কাজের পরিধি বাড়িয়ে দিলেন। এবার লোগো ডিজাইন থেকে বিজনেস কার্ড, ব্যানার, ফেসবুক কভার পেজ, লেটারহেড ও স্টেশনারি কাজের অর্ডার পেতে লাগলেন। যেসব ক্লায়েন্ট এসব কাজে সন্তুষ্ট হলেন তারা সংশ্লিষ্ট আরও কাজ তাকে দেয়া শুরু করলেন। এতে তার আয় বাড়তে থাকে। এ বছরের মে পর্যন্ত তার সামনে কাজের স্তূপ পড়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে ইন্টারনেট বড় সমস্যা হয়ে গেল তার জন্য। তার বাড়ি যেখানে সেখানে একটানা দুদিন পর্যন্ত কোন কোন সময় ইন্টারনেট সংযোগ থাকে না। এ অবস্থায় তিনি জরুরি প্রয়োজনে ছুটে যান বন্ধুদের বাসায়। যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাদের প্রতি তার পরামর্শ কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাড়তি কিছুকে সব সময়ই ছাড় দিতে হয়। ক্লায়েন্টের চাওয়ার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সে মতো কাজ করুন। তারাই আপনাকে সামনে টেনে নেবেন। অনেক ফ্রিল্যান্সার আছেন যারা প্রতিদিন কয়েক শত প্রজেক্টে বিড করেন কিন্তু হতাশ হন। একটি প্রজেক্টও পান না। তার পরামর্শ হচ্ছে, আপনি যে বিষয়ে দক্ষ এমন প্রজেক্টগুলোতেই বিড করা ভাল। যেসব ফ্রিল্যান্সার অন্যের প্রজেক্ট থেকে কপি করে তা দিয়ে প্রজেক্ট বানান তারা বেশিদূর যেতে পারেন না। দানিয়েল একাই নন, অনলাইন ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ৭০ জনকে। তাদের সবাই এখন প্রতি মাসে কয়েক হাজার ডলার আয় করছেন। দানিয়েল বলেন, শুধু দক্ষতা অর্জনই যথেষ্ট নয়। আপনাকে জানতে হবে কিভাবে নিজেকে যথাযথভাবে ব্যবহার করবেন।

No comments

Powered by Blogger.