ভয়ে ভারত ছাড়তে চান আমির পত্নী

লেখকদের পর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান। এবার মুখ খুললেন আরেক সুপারস্টার আমির খান। প্রতিবাদে শামিল হয়ে তিনিও যোগ দিয়েছেন এ কাতারে। সোমবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আয়োজিত সাংবাদিকতার এক পুরস্কার উৎসবে আমির বলেন, তিনি গত কয়েক মাসে অসহিষ্ণু কার্যকলাপ দেখে হুমকি বোধ করছেন। ইতিমধ্যে তার স্ত্রী কিরণ রাও সপরিবারে দেশ ছাড়ার বিষয়েও আলোচনা করেছেন বলে জানান আমির। ‘আমরা কাগজে পড়ছি কী ঘটছে। টিভিতে দেখছি কী ঘটছে এবং অবশ্যই আতংকিত হচ্ছি। কিরণের সঙ্গে যখন এ নিয়ে কথা বলি, ও জিজ্ঞাসা করে- আমাদের কি ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত? ও ওর বাচ্চার জন্য ভীত। আমাদের চারদিকের অবস্থা কী হবে, তা ভেবে ও ভীত। ও এখন খবরের কাগজ খুলতে ভয় পায়।’ তিনি বলেন, “কিরণ আর আমি দু’জনেই সারা জীবন ভারতে কাটিয়েছি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে ভেবে ভয় পাচ্ছেন কিরণ।’’
আমির জানান, ‘যে কোনো অহিংস আন্দোলনেই তার সমর্থন রয়েছে। যতক্ষণ কেউ অহিংস পথে প্রতিবাদ জানান, ততক্ষণ তার প্রতিবাদ করার অধিকারও রয়েছে।’ এদিকে দিল্লির নিউ অশোকনগর থানায় বলিউডের এ মেগাস্টারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। দিল্লির রাস্তায় অভিনেতার পোস্টার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন বিজেপির কর্মী সমর্থকরা। অসহিষ্ণুতা প্রসঙ্গে বিজেপিকেও এক হাত নিয়েছেন আমির। তিনি বলেন, ‘টিভির ডিবেট শো-তে দেখি বর্তমান শাসক দল বিজেপি অসহিষ্ণুতার জন্য বিভিন্ন ঘটনাকে দায়ী করে। তারা বারবার ১৯৮৪ সালের কথা বলে। কিন্তু এটা কোনো কাজের কথা নয়।’ ধর্মের দোহাই দিয়ে যেভাবে সন্ত্রাসবাদ দানা বাঁধছে, তা নিয়েও কথা বলেন আমির খান। আমির মনে করেন, ধর্মের সঙ্গে আতংকবাদকে জুড়ে দেয়া উচিত নয়। আমিরের কথায়, ‘সন্ত্রাসবাদীদের কোনো ধর্ম নেই। তা সত্ত্বেও কোনো হিংসার ঘটনা ঘটলে,
তার সঙ্গে ধর্মকে জুড়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা আগে খুঁজি সে ইসলামিক জঙ্গি নাকি হিন্দু জঙ্গি। আমিরের পাশে রাহুল, কেজরি : অসহিষ্ণু বিতর্কে আমির খানের পাশে দাঁড়ালেন কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধী ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। টুইট বার্তায় রাহুল বলেছেন, ‘মোদি ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাদের দেশদ্রোহী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা উচিত নয়। তার বদলে সমালোচকদের সঙ্গে কথা বলুক কেন্দ্র। বোঝার চেষ্টা করুক কোন পরিস্থিতিতে এমন মন্তব্য করছেন তারা। এদেশে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হয়, গা জোয়ারি করে বা ভয় দেখিয়ে নয়।’ অন্যদিকে কেজরিওয়াল লিখেছেন, আমির খানের বলা প্রতিটি শব্দ ভীষণ সত্য। বলিউড পাড়ায় শোরগোল ঋষি কাপুর : ‘প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশে সংস্কারের প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে দেশ ছেড়ে না পালিয়ে সেই ভুলগুলো শুধরে দিন আমির খান এবং কিরণ রাও। এটাই হিরোইজম।
রবিনা টন্ডন : ‘যারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদিকে দেখতে চাননি, তারাই এখন সরকারকে ফেলার চেষ্টা করছেন। রাজনীতির জন্য আসলে তারা দেশকেই লজ্জিত করছেন।’
রামগোপাল বর্মা : ‘আমির, শাহরুখ, সালমান- তিন মুসলিম দেশের সব থেকে জনপ্রিয় তারকা। এর থেকে কি প্রমাণ হয় না, ভারত সহিষ্ণু!’
পরেশ রাওয়াল : ‘আমির তুমি একজন যোদ্ধা। দেশে থেকে খারাপ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করা উচিত। জিনা ইঁহা, মরনা ইঁহা। একজন দেশপ্রেমিকের দেশ ছেড়ে যাওয়া উচিত নয়। এটাকে মাতৃভূমি ভাবলে কখনোই পালানোর কথা বলতাম না। তবে না ভাবলে অবশ্যই বলতাম।’
স্মৃতি ইরানি : ‘ভারত সহিষ্ণু বলেই আমির খান এত কথা বলতে পারছেন।’
শাহনওয়াজ হুসেন : ‘রাহুল গান্ধী এখন আমির খানের হয়ে কথা বলছেন। এর থেকেই স্পষ্ট, দেশকে কলংকিত করার ষড়যন্ত্র চলছে।’
বিজেপি নেতা মনোজ তিওয়ারি : ‘আমার মতো যারা এতদিন আমির খানের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, তা এ মন্তব্যের পর হারিয়ে যাবে।’

No comments

Powered by Blogger.