টিআইবির নিবন্ধন: সংসদের কাছে সহনশীলতা কাম্য

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নিবন্ধন বাতিলে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশ সংবিধানস্বীকৃত বাক্স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি অনুযায়ী সংসদীয় কমিটির ওই সুপারিশমতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা এনজিও ব্যুরো টিআইবির নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ মানতে বাধ্য নয়। অন্য বহু গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ নির্বাহী বিভাগ আমলে নেয় না। তদুপরি সংসদীয় কমিটির সুপারিশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে উন্নয়ন অংশীদারেরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হতে পারেন।
যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকৃত এবং বলা বাহুল্য যে টিআইবির মতো সংস্থাগুলোর অব্যাহত সক্রিয় ভূমিকা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে। এ অবস্থায় শুধু শালীন-অশালীনের প্রশ্ন তুলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করার চিন্তা কার্যত স্বেচ্ছাচারী মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ।
এটা অনস্বীকার্য যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানেরই জবাবদিহি ও তর্ক-বিতর্কের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। টিআইবি সংসদ সম্পর্কে কোনো ভুল তথ্য দিলে তাকে সঠিক তথ্য দিয়ে খণ্ডন করাটা স্বাভাবিক রীতি। কেবল এনজিও হিসেবে গণ্য করে তার বাক্স্বাধীনতার সীমা-পরিসীমা নির্ধারণ সর্বজনীন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর আঘাত বলে মনে করি। টিআইবির তরফে অযথাযথ মন্তব্য বা সমালোচনা করা হলে তার উত্তরে সংসদের তরফে অধিকতর দায়িত্বশীল ও যথাযথ উপায়ে সমালোচনা বা গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া দেখানোটাই সমীচীন। কারণ, সংসদের মর্যাদা অনেক উঁচুতে, একে বলা হয় ‘হাউস অব দ্য নেশন’।
আমাদের বিরোধী দল গঠনমূলক ভূমিকা পালন থেকে অনেক দূরে, সেটি কেবল বর্তমান সংসদের জন্যই প্রযোজ্য নয়। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সংসদে যারা বিরোধী দল ছিল, তাদের সংসদে অনুপস্থিতি নিয়ে টিআইবি কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সংসদকে অবমাননা নয়, এর কার্যকারিতা বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য।
এ অবস্থায় সংসদের উচিত হবে টিআইবির প্রতি অধিকতর সহনশীলতা প্রদর্শন করা।

No comments

Powered by Blogger.