সৌরঝড় বিনাশ ঘটতে পারে সভ্যতা

সাত বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে পৃথিবীর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। শেষ হতে পারে আধুনিক এই সভ্যতা। অচল হয়ে যেতে পারে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ব্যবস্থা। এমন অবস্থা চলতে পারে মাসের পর মাস। এমন ভয়াবহ এক ধ্বংসলীলার আশঙ্কায় এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল। এতে বলা হয়, মহাশূন্যের আবহাওয়া বিষয়ক বিজ্ঞানী জন কেপেনম্যান বলেছেন, ২০২২ সালের মধ্যে আসতে পারে একটি সৌরঝড়। সেই সৌরঝড়ে সূর্য থেকে পৃথিবীর দিকে প্রচণ্ড বেগে ছুটে আসতে পারে অতি শক্তিশালী তেজস্ক্রিয়তা। এর প্রভাবে পৃথিবীতে ঘটে যেতে পারে বিরাট এক বিবর্তন। আবহাওয়ায় দেখা দেবে ভয়াবহ এক বিপর্যয়। শুধু তা-ই নয় সমস্ত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সর্বশেষ এমন এক সৌরঝড় পৃথিবীতে আঘাত করেছিল ১৮৫৯ সালে। তখন ইউরোপজুড়ে ও উত্তর আমেরিকায় ভয়াবহ এক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল। সৌরঝড়ের অতি শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় শক্তির ফলে টেলিগ্রাফ লাইনগুলো বিস্ফোরিত হয়েছিল। কিছু টেলিগ্রাফ অফিসে আগুন ধরে গিয়েছিল। বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটেছিল। কিন্তু আধুনিক পৃথিবীতে যদি এমন একটি সৌরঝড় আঘাত করে তাহলে এর চেয়ে অনেক বেশি ধ্বংসলীলা সাধিত হবে। কারণ, এখনকার পৃথিবী সেই ১৮৫৯ সালের তুলনায় বহুগুণ উন্নত। বিশেষ করে প্রযুুক্তিগত দিক দিয়ে তার অগ্রগতি অকল্পনীয়। ফলে যদি সৌরঝড় পৃথিবীকে আঘাত করে প্রথমেই এসব বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় সৃষ্টি হবে বিপর্যয়। সূর্য থেকে সৌরঝড় আকারে ছুটে আসা তেজস্ক্রিয় কণা থাকে অতি শক্তিশালী আয়নিত অবস্থায়। বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও আয়নিত। ফলে এ দুটির মধ্যে বিক্রিয়া ঘটবে সহজেই। ভবিষ্যৎবাণীতে বলা হচ্ছে, সৌর ঝড়ের ম্যাসিভ ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) সব পাওয়ার গ্রিডকে উড়িয়ে দিতে পারে। ধ্বংস করে দিতে পারে আধুনিক সভ্যতা। মোবাইল ফোন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ইন্টারনেট হয়ে পড়তে পারে অব্যবহার অনুপযোগী। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এমন একটি সৌরঝড় যদি আঘাত করে পৃথিবীতে তাতে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার। এর আগে এমন একটি সৌরঝড় পৃথিবীকে আঘাত করার কথা ছিল ২০১২ সালে। তবে পৃথিবীর মানুষের সৌভাগ্য। তখন সৌরঝড়টি পৃথিবীর বাইরে দিয়ে সরে যায়। বিজ্ঞানী জন কেপেনম্যান বলেন, খোলাখুলি বলছি- এবার যে সৌরঝড়টি আসতে পারে তা হবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। তাতে আক্রান্ত হতে পারে পৃথিবীর বেশির ভাগ অংশ। এমন একটি সৌরঝড় বড় রকমের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে এমনটা স্বীকার করেছেন অফিস অব দ্য সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পলিসির সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ডাইরেক্টর-এর প্রেসিডেন্টের সহকারী জন পি হোলড্রেন। তিনি বলেন, মহাশূন্যে যা ঘটছে তা প্রাকৃতিক। তা থেকে যে প্রভাব পড়ে তা অর্থনীতি ও সামাজিক জীবের ওপর বড় আঘাত হতে পারে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের সহকারী পরিচালক বিল মার্টাঘ বলেন, এটা একটি বাস্তব ভীতি। এটা ঘটতেই পারে। এ জন্য ওই সম্ভাব্য দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নেয়া হয়েছে ছয় দফা পরিকল্পনা। এর মধ্যে একটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে হুমকির পরিমাণ যথাযথভাবে পরিমাপ করার জন্য। যেমনটা ভূমিকম্প মাপার জন্য রিখটার স্কেল ব্যবহার করা হয়। একই সঙ্গে পূর্বাভাষ দেয় যেসব প্রযুক্তি তার মান উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। তবে মহাশূন্যের সৌর ঝড়ের বা মহাশূন্য থেকে আসা কোন বিপদের যথাযথ পূর্বাভাষ করা কঠিন। কারণ, ১৫ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে তা আঘাত করে বসতে পারে। তাই মহাকাশের আবহাওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য অত্যাধুনিক নতুন স্যাটেলাইট বসানোর পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। পৃথিবীকে প্রযুক্তির মান উন্নয়ন করা হতে পারে, যাতে এগুলো দিয়ে বিপর্যয়ের পূর্বাভাষ দেয়া যায়। এ জন্য পুরনো স্যাটেলাইটগুলো সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন সরকার।

No comments

Powered by Blogger.