এনালগ থেকে ডিজিটাল by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

‘পরীক্ষার আগের রাতেই বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নপত্র হাতে পেতাম। বন্ধুদের মাধ্যমে এগুলো আমার কাছে আসতো। রাতে পাওয়া প্রশ্নপত্র পরদিন পরীক্ষার হলে প্রশ্নের সঙ্গে প্রায় মিলে যেত। এজন্য কিছু টাকাও দিতে হয়েছে। পরীক্ষা ভাল হলেও মনে মনে নিজকে অপরাধী ভাবতাম।’
কথাগুলো বলেছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি এখন রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েশন লেভেলে পড়াশোনা করছেন। থাকেন আজিমপুরে। ২০১৩ সালে বাণিজ্যিক বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ড থেকে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন তিনি। ২০১৪ সালে রাজবাড়ী থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিশু টুম্পা (ছদ্মনাম)। এই পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। ওই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে তার ছোট চাচা এই প্রতিবেদককে বলেন, পরীক্ষার আগের রাতেই তারা বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে যেতেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে, কখনওবা ফেসবুকের সুবাদে। তা হুবহু মিলে যেত। এই যদি হয় আমাদের পরীক্ষার অবস্থা, তাহলে শিক্ষার্থীরা কি শিখবেন বলে তিনি নিজেই প্রশ্ন করেন। একই পরীক্ষায় ঢাকা থেকে অংশগ্রহণকারী অপর আরেক শিশু পরীক্ষার্থীর বাবা জিয়া উদ্দিন বাবুল বলেন, দেশে কি পরীক্ষা আছে? তার ছেলের পরীক্ষার সময়ে ওর বন্ধুরা ফোন করে করে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন দিয়েছে। যা পরীক্ষায় হুবহু এসেছে। শিশুরা প্রশ্ন হাতে পেলে পড়তে চায় না বলে উল্লেখ  করেন তিনি।
শুধু সাদ্দাম ও টুম্পা নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস থামানো যাচ্ছে না। প্রাইমারি থেকে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা- কোন পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয় না- এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া এখন কঠিন। সমপ্রতি মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর তা নিয়ে দেশব্যাপী ঝড় উঠেছে। এখনও পরীক্ষার্থীরা আন্দোলনে রয়েছে।
নকল প্রবণতা কমে যাওয়ার পর অব্যাহতভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষায় একটি বা দুটি প্রশ্নের উত্তর নকল করে দেয়া যায়। কিন্তু ফাঁস হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রতিটি প্রশ্নই আগে থেকে জেনে যাচ্ছে। সে অনুযায়ী উত্তর তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পরীক্ষা বলতে প্রশ্ন কমন পড়ার যে অনিশ্চিয়তা বা ভাল ফলাফল করার জন্য যে প্রস্তুতি তার কোনটাই নেয়ার আগ্রহ থাকে না শিক্ষার্থীদের। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করছে। তাদের মতে, প্রশ্ন ফাঁসের পর তদন্ত কমিটি হয়, কিন্তু বিচার হয় না। এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার তদন্তের আড়ালে হারিয়ে যায়। নকল বন্ধের মতো প্রশ্ন ফাঁস রোধেও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়? ফাঁস হয় কোথা থেকে: শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা বলছেন, প্রশ্ন ফাঁসে এক ধরনের মহোৎসব চলছে। সব পরীক্ষায়ই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। কিন্তু যারা ফাঁসের সঙ্গে জড়িত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এক ধরনের লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটি তদন্তে কি প্রমাণ পেল, কারা দায়ী তা প্রকাশ করছে না।
বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, চার জায়গা থেকে প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে প্রথম তীর সরকারি ছাপাখানা বিজি প্রেসের দিকে। দ্বিতীয়ত, যারা প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত। তৃতীয়ত, যেখানে প্রশ্নগুলো সংরক্ষিত আছে। চতুর্থত প্রশ্ন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরবরাহের সময়। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন বিক্রি এখন সবচেয়ে সহজ ও লাভজনক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি সিন্ডিকেটের কাছে। এক রাতেই প্রশ্নপত্র বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে অপরাধী চক্র। একের পর এক ফাঁস হচ্ছে পাবলিক ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে গত ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে।
টিআইবির গবেষণায় বলছে, প্রশ্ন প্রণয়ন, ছাপানো ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাব্য ঝুঁকি থাকে। প্রশ্ন প্রণয়ন ও চূড়ান্তকরণ পর্যায়ে: পিইসিই, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট  বোর্ডের নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশ্নকর্তা নিয়োগ করার জন্য শিক্ষক বাছাই করার মধ্য শুরু হয় প্রশ্ন প্রণয়নের প্রাথমিক কার্যক্রম। শিক্ষক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  পরে এ বিষয়কে পুঁজি করে নিজ নিজ স্কুল ও কোচিং সেন্টারে সাজেশন হিসেবে ওই প্রশ্নগুলো দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের দ্বারা প্রশ্ন চূড়ান্ত হয়ে যায় বলে এই পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের একাংশের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকার সুযোগ রয়েছে। আবার মডারেশন পর্যায়ে প্রশ্ন চূড়ান্ত হয়ে যায় বলে এই পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একাংশের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকার সুযোগ থেকে যায়।
প্রশ্ন ছাপানোর পর্যায়ে:  কম্পোজার প্রশ্ন দেখার সুযোগ পান বলে কম্পোজ করার সময়ে একাংশর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি থাকে। ছাপানোর কাঝে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের এককভাবে বা গোষ্ঠীগতবাবে প্রশ্ন মুখস্থ করে প্রশ্ন ফাঁস করার তথ্য পাওয়া যায়। ডিজিটাল পেপার কাউন্টার পদ্ধতি না থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও প্রশ্ন গণনা ও প্যাকেট করার সময় প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকি থেকে যায় বলে টিআইবির গবেষণায় ওঠে এসেছে। এছাড়া বিতরণের আগে সংরক্ষিত থাকা অবস্থায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের কিছু লোকের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হতে পারে।
প্রশ্ন বিতরণ পর্যায়ে: প্রশ্ন সংরক্ষণ ও বিতরণের সময় ছাপাপনো প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যোগসাজশের মাধ্যমে ফাঁস হওযার তথ্য এসেছে।
২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁস: একের পর এক ফাঁস হচ্ছে পাবলিক ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রই ফাঁস হচ্ছে। পরীক্ষার আগের দিন সন্ধ্যায় বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।  প্রভাবশালীদের কেউ কেউ এবং  প্রশাসনিক কিছু কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির উন্নতিতে সবকিছুর পাশাপাশি প্রশ্নপত্র ফাঁসেও এসেছে আধুনিকায়ন, ফাঁসের ধরনেও লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। পূর্বের প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি এখন প্রশ্ন ফাঁসে ব্যবহার করা হচ্ছে মোবাইল, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ঘড়ি ও ইন্টারনেট।
অনেক ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও সরকারদলীয় বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না তারা। ফলে আইনের ফাঁকফোকর এবং সরকারি ছত্রছায়ায় তাদের সমর্থক শক্তিশালী সিন্ডিকেটচক্র সব সময়ই শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। এতে সিন্ডিকেট চক্রের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েই চলছে।
২০১০ সালের ৮ই জানুয়ারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা হলেও পরীক্ষা বাতিল হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে গত ২০১০ সালের ২১শে জানুয়ারি। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে অনার্স প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষার তিনটি সেটের সবটাই ফাঁস হয়। এ ঘটনায় ওই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছিল। প্রশ্ন ফাঁসের সিন্ডিকেটের কয়েক তাৎকালীন বিজনেজ স্টাডিজ অনুষদের ছাত্রলীগ কর্মী  সুমন ও সূর্যসেন হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের টিটুসহ ৫জন গ্রেপ্তার ও তদন্ত কমিটিও করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সিন্ডিকেট চক্রটি আইনের ফাঁকফোকরে পার পেয়ে যায়।
২০১০ সালের ২৮শে আগস্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। ২০১০ সালের ৮ই জুলাই সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের সহকারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ২০১০-১১ সালে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ২০১১ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় সিন্ডিকেট চক্রের ছাত্রলীগ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
২০১১ সালে অডিট বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ২০১২ সালের ২৭শে জানুয়ারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই খাদ্য অধিপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ওই পরীক্ষা বাতিল করা হয়। ২৭ জুলাই জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগের রাতে পুরান ঢাকার একটি হোটেল থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নসহ ১৬ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১২ বছরের ৩ আগস্ট জতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে নিয়োগের বাছাই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে পরীক্ষায় হলের প্রশ্নের শতভাগ মিলে গেলেও ওই পরীক্ষা বাতিল বা তদন্ত হয়নি। একই বছরের ২১শে সেপ্টেম্বর ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই এটিরও প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়। ওই পরীক্ষার আগের রাতে এবং পরীক্ষার দিন সকালে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। ২০১২ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে ৩৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সব বিষয়ে প্রশ্ন ফাঁস হয়। এ ঘটনায় ৬ই অক্টোবর পিএসসি পরীক্ষা স্থগিত করে। ওই বছরের ২১ ও ২২শে নভেম্বর শিশু শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার (পিএসসি) গণিত ও বাংলা বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়।
ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হওয়ার প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। গত বছর ১২ অক্টোবর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার পশ্নপত্র ফাঁসেরও অভিযোগ ওঠে।
 ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) চলতি বছরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৯ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও গত পাঁচ বছরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ একটি নিয়মিত ঘটনা হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার বছরে বিভিন্ন বিষয়ের মোট ৬৩টি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। তার মধ্যে ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পিইসিই (প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী) ও জেএসসি পরীক্ষার সব পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগের তথ্য পাওয়া যায়।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রশ্ন ফাঁস:  এখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও প্রথমে গণহারে সবাই পায় না। সিন্ডিকেট চক্র পরীক্ষার কয়েক দিন আগে নির্দিষ্ট প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা চায়। যারা টাকা পরিশোধ করে, শুধু তাদেরই বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গোপনে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়। প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সুবিধা সহজলভ্য হওয়ায় কয়েক বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ধরন বদলেছে। এতে ফাঁসের আগেই তথ্য পাওয়া, অপরাধীদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনা দুরূহ হয়ে পড়ছে। এ কারণে বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। মোবাইল, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন মুহূর্তের মধ্যেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। পরীক্ষার হল থেকে সিন্ডিকেট চক্র প্রশ্ন মুহূর্তের মধ্যেই বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তা কারেকশন করে সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ রাখা অসদুপায় অবলম্বনকারী প্রার্থীদের মোবাইল ফোনে খুদেবার্তার মাধ্যমে পাঠিয়ে দিচ্ছে। গত কয়েক বছর এমন ঘটনা প্রত্যেক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অহরহ ঘটছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তারা পরীক্ষার হলে মোবাইল, সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। পরীক্ষার্থী হল থেকে মোবাইল, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার অপরাধে অনেকেই হাতেনাতে ধরা পড়েছে। তবে কেন্দ্রের অব্যবস্থাপনা, হল পরির্দশকদের শিথিলতা, নিরাপত্তা ও কড়াকড়ি নির্দেশ না থাকার কারণে প্রশ্ন ফাঁসের নতুন কৌশলকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.