গণতন্ত্রে ফেরার সদিচ্ছা নেই ক্ষমতাসীনদের

গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা এখন পুলিশের ধাওয়ার মুখে রয়েছেন। রাজাধানীর কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারবিরোধী হিসেবে সামান্য পরিচিতি থাকলেও পুলিশ বিশেষ করে তরুণ-যুবকদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ যেন যাকে পাও তাকেই ধরো এবং জেলখানায় ভরো ধরনের ব্যাপার-স্যাপার! ফলে দেশের সব কারাগারেই এখন ‘ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই’ অবস্থা চলছে। একশ’জনের জন্য নির্মিত কারাগারে থাকতে হচ্ছে পাঁচ থেতে সাতশ’ জন পর্যন্ত বন্দিকে। দেশের ৬৮টি কারাগারেই বন্দীরা মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। এদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। ক্ষমতাসীন দলের কাউকে কিন্তু পাওয়া যাবে না কোনো কারাগারে। কারণ, রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রথম থেকেই তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। এখনো বড় অপরাধের জন্যও গ্রেফতার করা হচ্ছে না কাউকে। ক্ষমতাসীন দলের প্রমাণিত অপরাধীদের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সংযমী এমনকি অনিচ্ছুক দেখা যাচ্ছে সরকারকে। টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের এমপি আমানুর রহমান খান রানার কথাই ধরা যাক। আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমদকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এবং আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। পুলিশ নাকি তাকে খুঁজেই পাচ্ছে না! অন্যদিকে এমপি রানা কিন্তু সময়ে সময়ে হাই কোর্টে গিয়ে হাজির হচ্ছেন, তিনি এমনকি সংসদে গিয়ে হাজিরা খাতায়ও স্বাক্ষর করেছেন। একই অবস্থা চলছে ফারুক আহমদ হত্যা মামলার আসামী এবং এমপি রানার অন্য তিন ভাইয়ের ক্ষেত্রেও, যাদের মধ্যে একজন আবার টাঙ্গাইল সিটি করপোরেশনের মেয়র। প্রায় প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা। কিন্তু পুলিশই কেবল ‘খুঁজে’ পাচ্ছে না তাদের! এ ব্যাপারে সর্বশেষ উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন গাইবান্ধা-১ আসনের আওয়ামী এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন। গত ২ অক্টোবর নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে সুন্দরগঞ্জ প্রাইমারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শাহাদত হোসেনের দু’ পায়ে গুলি করেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এমপি লিটনের নিজের এলাকায় মানুষ প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে। থানায় হত্যা চেষ্টার জন্য মামলা হয়েছে। লিটনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে। কিন্তু যাকে বলে আওয়ামী পুলিশ! আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ নাকি তাকে খুঁজে পায়নি! এ অবস্থারই সুযোগ নিয়ে গত ১২ অক্টোবর হাই কোর্টে আগাম জামিন নেয়ার জন্য একেবারে সশরীরে হাজির হয়েছিলেন এমপি লিটন। মাননীয় বিচারপতিরা তাকে অবশ্য জামিন না দিয়ে তাকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে গাইবান্ধার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনাপ্রবাহে পুলিশের ভ’মিকা ছিল রহস্যজনক। কারণ, যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে এতদিন প্রচার করা হয়েছে সে এমপি নিজেই পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে আদালতে পৌঁছেছেন, সেখান থেকে আবার চলেও গেছেন। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। এতটাই আইন মেনে চলে আওয়ামী পুলিশ! একই কারণে দুই এমপি রানা ও লিটনের পাশাপাশি আরো অনেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। কারো ব্যাপারেই সরকারকে এবং সরকারের ইঙ্গিতে পুলিশকে তৎপর দেখা যাচ্ছে না। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রে সে একই পুলিশের ভূমিকা মারাত্মক হয়ে উঠছে। দেশজুড়ে চলতে থাকা গণগ্রেফতার এবং নিষ্ঠুর দমন-নির্যাতনের বিষয়টিকে অবশ্যই হেলাফেলা করার সুযোগ নেই। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির যে আরো বেশি অবনতি ঘটবে সে ব্যাপারে ক্ষমতাসীন নেতারা বেশ জোরের সঙ্গেই জানান দিয়ে চলেছেন। বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে আসলে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে। বলা বাহুল্য, সে পরিকল্পনায় গণতন্ত্রসম্মত সদিচ্ছার কোনো উপাদান বা ইঙ্গিত নেই। সমঝোতা এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য চেষ্টা চালানোরও কোনো সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ সরকার যথারীতি ফ্যাসিস্ট পন্থাতেই এগিয়ে চলেছে। ‘অবৈধ’ হিসেবে বর্ণিত এবং একদলীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আগত বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দিক থেকে এটা অবশ্য নতুন কোনো বিষয় নয়। কারণ, নামে ‘নির্বাচিত’ এবং ‘গণতান্ত্রিক’ হলেও প্রথম থেকেই সরকার বিরোধী দলের টুটি টিপে ধরার কর্মকান্ডেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে। পুলিশ এবং র্যাবের সীমা ছাড়ানো দৌরাত্ম্যের কারণে দেশের কোনো এলাকাতেই বিরোধী দল কখনো বাধাহীনভাবে কোনো মিছিল-সমাবেশ করতে পারেনি। এমনকি আইন মেনে আগে থেকে লিখিত অনুমতি নেয়ার পরও বিরোধী দলের অনেক কর্মসূচিকেই সরকার ভন্ডুল করে দিয়েছে। বিএনপির লংমার্চ ধরনের কোনো কোনো কর্মসূচিকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য সরকার সারাদেশে যানবাহনের চলাচল পর্যন্ত বন্ধ করিয়েছে, রাজধানীকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। এখনো সরকারের সে ফ্যাসিস্ট নীতি ও কর্মকান্ডে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিএনপির মতো ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত দল এমনকি মানববন্ধন পর্যন্ত করতে পারছে না। সরকার অঘোষিতভাবে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে। আপত্তি ও প্রতিবাদ উঠেছে বিশেষ করে সময়ের জন্য। কারণ, একদলীয় জাতীয় সংসদ নিয়ে কোনো মীমাংসা হওয়ার আগেই সরকারের পক্ষ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা তথা সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আয়োজন করা হবে। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচনগুলো হবে দলীয় ভিত্তিতে। প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ দলীয় মনোনয়ন ছাড়া কেউই প্রার্থী হতে পারবেন না। এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এ সময়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই তৎপর হয়ে ওঠার কথা। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোকে কোথাও একটি সাধারণ সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না। এর ওপর আবার শুরু হয়েছে গণগ্রেফতার এবং দমন-নির্যাতন। নেতা-কর্মীদের ঘরোয়া বৈঠককে পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের বিচিত্র অভিযোগে ভন্ডুল করা হচ্ছে। তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। অনেকের হদিস পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এত কিছুর পরও ‘দম’ ফেলার সময় পাচ্ছেন না ক্ষমতাসীনরা। সম্প্রতি তারা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে হঠাৎ করে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন এবং জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচন হবে দলীয় ভিত্তিতে। দলীয় প্রতীক ব্যবহার করাও প্রার্থীদের জন্য হবে বাধ্যতামূলক। সিদ্ধান্তটিকে ‘মহা দুরভিসন্ধিমূলক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিএনপি। জামায়াতসহ অন্য সব দলও একই প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, বাংলাদেশে এতদিন স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে। এর ফলে কোনো দলের পক্ষেই সরাসরি এমন দাবি করা সম্ভব হয়নি যে, দলটির এতজন মেয়র বা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তটি আইনে পরিণত হলে এবং সে অনুযায়ী সত্যি নির্বাচন করা হলে দলগত পরিচিতি দেয়াটা সহজ হয়ে উঠবে। পর্যবেক্ষকদের মতে এখানেই রয়েছে সরকারের আসল উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে এখন এমনকি শিশু-কিশোরদেরকেও বুঝিয়ে বলতে হয় না। ধরেই নেয়া হয় যে, বিএনপির মতো প্রধান ও জনসমর্থিত দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হবে না। কোনো কোনো এলাকায় দেয়া হলেও তাদের বিজয় ছিনতাই করা হবে নয়তো কিছুদিনের ব্যবধানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করবে সরকার- যেমনটি বিগত মাসগুলোতে দেখা গেছে। সরকারবিরোধী মেয়র ও চেয়ারম্যানদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বরখাস্ত করেছে সরকার। প্রতিটি এলাকায় তাদের স্থলে আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা এখন আর কোনো বাঁকা পথে হাঁটতে চাচ্ছেন না। সবকিছু তারা ‘আইনসম্মতভাবে’ করতে চাচ্ছেন বলেই এসেছে নতুন সিদ্ধান্ত। অথচ এ ধরনের যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা ও বিতর্ক করা এবং সবশেষে সংসদের মাধ্যমে আইনে পরিণত করা দরকার। এটাই সংবিধানের নির্দেশনা। অন্যদিকে সংসদে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সে সময়টুকুও ব্যয় করতে চাচ্ছেন না ক্ষমতাসীনরা। আইনটি সরাসরি ওপর থেকে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন তারা। সংশয়ের সৃষ্টিও হয়েছে একই কারণে। আবারও জোর আলোচনা শুরু হয়েছে বাকশাল নিয়ে। বলা হচ্ছে, নানা আইনের আড়াল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলে মরহুম পিতার পথেই পা বাড়াতে চাচ্ছেন। পার্থক্য হলো, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছা ও নির্দেশে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করা হয়েছিল। সংশোধনী পাস করার সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিব রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। চতুর্থ সংশোধনীর ফলে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতি বাতিল হয়ে যায়, রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি প্রবর্তিত হয় এবং সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে দেশে একটি মাত্র দল প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই সংশোধনীর ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল গঠন করেছিলেন। উল্লেখ্য, তারও আগে ১৯৭৩ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত এবং ব্যাপকভাবে বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল। ওই নির্বাচনে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতেই সকল ‘কম্ম’ সম্পন্ন করা হয়েছিল। ‘ওরে জিতাইয়া দে’, ‘ওরে হারাইয়া দে’ ধরনের নির্দেশ ও ধমকের জোরে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৭টি আসনেই জিতেছিল আওয়ামী লীগ। সুতরং অমন একটি সংসদকে দিয়ে জাতির ঘাড়ে বাকশালের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপানো কোনো কঠিন বিষয় ছিল নাÑ যদিও এ ধরনের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোতে জনমত যাচাই এবং গণভোট অনুষ্ঠান করা গণতন্ত্রে একটি অবশ্যপালনীয় কর্তব্য। কিন্তু এক দলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনের সময় জনগণের ম্যান্ডেট চাওয়া হয়নি। গণভোটেরও আয়োজন করা হয়নি। শেখ মুজিব এতটাই ক্ষমতাধর ও কর্তৃত্বপরায়ণ নেতা ছিলেন যে, তার সামনে ‘না’ বলার মতো সৎসাহস কারো ছিল না। প্রধান জাতীয় নেতা মওলানা ভাসানীকে আগেই গৃহবন্দী করা হয়েছিল। ভাসানী ন্যাপসহ অন্য কয়েকটি দলের নেতারা ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, কয়েকজন পালিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুদের জাসদ বাকশালকে সমর্থন দিয়েছিল সুকৌশলে। বলা হয়, স্বাধীনতার পর পর দেশে যখন সবে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সরকারের বিরোধিতা শুরু হয়েছিল ঠিক তখনই রাজনৈতিক দলের নামে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জাসদ। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, ১৯৭২ সালে জাসদেও পাশাপাশি তথাকথিত ‘গণবাহিনীর’ প্রতিষ্ঠাই ঘটেছিল গণতন্ত্রের বিনাশ ঘটানোর জন্য। সদ্য স্বাধীন দেশে সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দিয়ে জাসদ একদিকে গণতান্ত্রিক বিরোধী দলগুলোর সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনীতিকে বাধাগ্রস্ত করেছিল, অন্যদিকে সরকারকে উস্কানি দিয়েছিল হত্যার পথে পা বাড়াতে। মূলত জাসদ ও ‘গণবাহিনীর’ সশস্ত্র তৎপরতা প্রতিহত করার তাগিদ থেকেই মুজিব সরকার রক্ষীবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছিল। রক্ষীবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রায় ৩৭ হাজার ছাত্র-যুবকের মৃত্যু ঘটেছিল। এই বিপুল সংখ্যক ছাত্র-যুবকের মৃত্যুর জন্য সরকারের সঙ্গে দায়ী ছিল জাসদ ও তার ‘গণবাহিনী’। এ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বলা হয়, জাসদই প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের হাতে বাকশাল গঠনের অজুহাত তুলে দিয়েছিল। বর্তমান পর্যায়ে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, মন্ত্রী ইনুসহ সে একই জাসদ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করে চলেছে। সুতরাং নতুন মোড়কে বাকশাল প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে কিছু কথা অবশ্য স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তুলনায় তার পিতা মরহুম শেখ মুজিবুরর রহমান অনেক বেশি জনপ্রিয় ও ক্ষমতাধর নেতা ছিলেন । তা সত্ত্বেও তার সর্বশেষ কীর্তি বাকশাল টেকেনি। না টেকার কারণ, জনগণ বাকশালকে গ্রহণ করেনি, প্রত্যাখ্যান করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে এরই দায়ভার টানতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। সে টানাটানির শেষ না হতেই শুরু হয়েছে আরো একটি কান্ড বা কীর্তি যুক্ত করার প্রচেষ্টা। পার্থক্য হলো, মরহুম শেখ মুজিব জাতীয় সংসদের আড়াল নিয়ে ওপর থেকে বাকশাল নামের একদলীয় স্বৈরশাসন চাপিয়েছিলেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদ তথা একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে সবকিছু নিজের দখলে আনতে। এখন দেখার বিষয়, সব দলকে বাইরে ঠেলে দিয়ে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের কারাগারে অথবা ধাওয়ার মুখে রেখে আয়োজিত একতরফা এবং একদলীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সত্যিই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সকল স্থানীয় সরকার দখল করাটা সম্ভব হয় কি না। যা কিছুই ঘটুক না কেন সরকার যে সহজে গণতন্ত্রসম্মত পথে ফিরে আসার চিন্তা করবে না- এ কথাটা নিশ্চিতভাবেই বলে রাখা যায়। শাহ আহমদ রেজা: সিনিয়র সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.