গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেছেন, “যে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই স্লোগানের এতবড় অপমান আমি আমার জীবনে দেখিনি।”রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ভিসিবিরোধী শিক্ষকদের জোট ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’-এর অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় তাদের ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে শোনা যায়। তারা আন্দোলনরত শিক্ষকদের ব্যানার  কেড়ে নেয় এবং তাদের গলা ধাক্কা দিয়ে এবং মারধর করে সরিয়ে দেয়। এই ফাঁকে ভিসি আমিনুল হক ভূঁইয়া প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে দোতলায় নিজের কার্যালয়ে চলে যান। ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাক্কায় অধ্যাপক ইয়াসমিন হক মাটিতে পড়ে যান। এক ছাত্রলীগ কর্মীকে এ সময় এক শিক্ষকের গায়ে লাথি মারতেও দেখা যায়। সে সময় ঘটনাস্থল থেকে হাত দশেক দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচক্করে একাকী বসে ছিলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক জাফর ইকবাল, যিনি ইয়াসমিন হকের স্বামী। ক্ষুব্ধ জাফর ইকবাল বলেন, “এখানে যে ছাত্ররা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তারা আমার ছাত্র হয়ে থাকলে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়া উচিত।” জনপ্রিয় এই লেখক জানান, ‘তিনি সরাসরি শিক্ষকদের আন্দোলনে অংশ না নিলেও আন্দোলনকারীদের প্রতি তার মায়া, ভালবাসা আছে। তারা যে কারণে আন্দোলন করছে, আমি তা ১০০ ভাগ সমর্থন করি। এ ভিসির যোগদানের দু’মাস পর আমি তার সঙ্গে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ আমি দেখেছি, উনি মিথ্যা কথা বলেন। যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলেন, তার সঙ্গে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।’ হামলার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আজ আমার জীবনে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হলো। আজ যা দেখলাম, আমার জীবনে এ ধরনের ঘটনা দেখবো তা আমি কখনও কল্পনা করিনি।” জাফর ইকবাল বলেন, গলায় দড়ি দিয়ে না মরলেও ‘তীব্র মানসিক যন্ত্রণায়’ তাকে ভুগতে হচ্ছে। “কিভাবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমার শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করতে পারলো, আর আমাকে সেটা এখানে বসে বসে দেখতে হলো!” এই শিক্ষক আরও অভিযোগ করেন, ভিসিই ছাত্রলীগকে শিক্ষকদের ওপর ‘লেলিয়ে’ দিয়েছেন। “তিনি যদি মনে করেন, এভাবে আন্দোলন থামানো সম্ভব, তবে সেটা ভুল করছেন। শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন কোন পদের জন্য নয়, শাবিকে বাঁচানোর জন্য।” কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে গত ১২ই এপ্রিল থেকে আন্দোলনে রয়েছে সরকারসমর্থক শিক্ষকদের একাংশের  জোট ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’। তাদের এ আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ‘অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র’ আখ্যায়িত করে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্ত চিন্তার চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ ব্যানারে ভিসির পক্ষে রয়েছেন সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের আরেকটি অংশ। অচলাবস্থা কাটাতে দুই পক্ষের সঙ্গেই বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নিয়োগ, নতুন ব্যবস্থা চালু বা কাউকে নতুন কোন পদে দায়িত্ব দিতে নিষেধ করে ভিসির ক্ষমতা কার্যত খর্বও করা হয়েছে। তারপরও ভিসির পদ না ছাড়ায় শিক্ষকরাও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.