৫৭ ধারা নিয়ে তিন রিট : একটি খারিজ, একটির শুনানি শুরু

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আলোচিত ৫৭ ধারা নিয়ে হাইকোর্টে তিনটি রিট মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট, একটির শুনানি শুরু হয়েছে এবং অন্য আরেকটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ও ৮৬ ধারা দুটি বাতিল চেয়ে গত ২৬ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব ও তথ্য সচিবকে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। তাতে সাড়া না পেয়ে পরদিন তিনি একটি রিট আবেদন করেন। তবে তার দায়ের করা রিট আবেদনটি রোববার খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি কাজী-রেজা উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এই আবেদনটির পক্ষে ইউনূস আলী আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। পরে তাপস কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, রিট আবেদনটি অপরিপক্ক বলে আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে ৫৭ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বুধবার অপর একটি রিট আবেদন করেন রাজধানীর পল্লবী এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন। পরদিন আবেদনটি বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চে উল্লেখ করা হলে আজ রোববার আবেদনটির উপর শুনানি শুরু হয়। আগামীকাল সোমবার আবারও এই আবেদনের উপর শুনানি হবে।
আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল অমিত তালুকদার ও সহকারি অ্যার্টনি জেনারেল নূসরাত জাহান।
পরে অমিত তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, অ্যার্টনি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করবেন বলে সময় চাওয়া হয়। আদালত সোমবার সোয়া ২টায় শুনানির সময় রেখেছেন। অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের আইনের ৫৭ ধারায় প্রশাসনকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যা সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৯ ধারার সাথে সাংঘর্ষিক বলে শুনানিতে বলা হয়।
জাকির হোসেনের করা এই রিট আবেদনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাকে সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ এবং ৩৯ ধারার সাথে সাংঘর্ষিক বলা হয়েছে। ওই ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল চেয়েছেন তিনি।
রিট আবেদনে আইন সচিব এবং যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সচিবকে বিবাদি করা হয়েছে। রিট আবেদনকারী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা একটি মামলার কার্যকমও স্থগিতের আর্জি জানানো হয়েছে এতে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে চলতি বছরের ২৪ জুলাই জাকিরের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় এই অভিযোগ দায়ের করেন তার সাবেক স্ত্রী। ফেইসবুকে ছবি এবং বিভিন্ন পোস্ট দিয়ে লেখালেখি করে হয়রানি ও হেয় করার অভিযোগ আনা হয়েছে ওই মামলায়। এ মামলায় গত ১০ অগাস্ট বিচারিক আদালত থেকে জামিন পান জাকির। এরপর ২৬ অগাস্ট রিট আবেদনটি নিয়ে হাইকোর্টে আসেন।
ওই ধারা বিলুপ্ত করতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানাতে গত ২৭ আগস্ট সরকারের তিন সচিবকে লিগ্যাল নোটিস দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও লেখকসহ ১১ ব্যক্তি। তারাও রোববার হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন। তাদের পক্ষে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আবেদনটি জমা দেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রিট আবেদনে ৫৭ ধারা বিলুপ্তির জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সেই সাথে ৫৭ ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। রিট আবেদনে আইন সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে বিবাদি করা হয়েছে। তিনি বলেন, সোমবার এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
২০০৬ সালে পাস হওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৯ ও ২০১৩ সালে দুই দফা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনে সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর থেকে ১৪ বছর কারাদণ্ড করা হয়। আর ৫৭ ধারার অপরাধকে করা হয় অজামিনযাগ্য।
৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোনো ব্যক্তির তথ্য যদি নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ করে, এতে যদি কারো মানহানি ঘটে, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তা হবে অপরাধ। এর শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১ কোটি টাকা জরিমানা।
আর ৮৬ ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে ‘সরল বিশ্বাসে করা’ কোনো কাজের কারণে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে সে জন্য সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারির বিরুদ্ধে মামলা বা কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।
ওই আইন হওয়ার পর থেকেই বিষয়টিকে ‘বাক স্বাধীনতা পরিপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করে তা বাতিলের দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।

No comments

Powered by Blogger.