‘সবাই আমার বাবুটারে ভালোবাসিছে’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়ার আগে মায়ের
কোলে সুরাইয়া। পাশে তার বাবাl ছবি: প্রথম আলো
বুকে-পিঠে গুলির ক্ষত নিয়ে প্রায় এক মাস আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিল নবজাতক সুরাইয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার মাথায় ফুলতোলা ব্যান্ড পরে মায়ের কোলে চড়ে হাসপাতাল ছেড়েছে সে। গতকাল রাতেই তাকে নিয়ে মাগুরার বাড়িতে পৌঁছেছেন বাবা-মা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গতকাল নিজেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়ার হাতে হাসপাতাল থেকে সুরাইয়ার বাড়িতে ফেরার ছাড়পত্র তুলে দেন। তিনি শিশুটি ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে বলে জানান।
গত ২৩ জুলাই মাগুরার দোয়ারপাড়ায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বা নাজমা খাতুন গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিনই প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সময় ধরে অস্ত্রোপচারের পর নাজমা মাগুরা সদর হাসপাতালে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। দুদিন পর শিশুটিকে নিয়ে তার দুই ফুফু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান। মাতৃগর্ভে শিশুটির পিঠ দিয়ে গুলি ঢুকে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে অস্ত্রোপচারের পর নিবিড় পরিচর্যায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে সে।
দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করে। শিক্ষক ও ছাত্ররা কলেজের সভাকক্ষটি বেলুন দিয়ে সাজান। ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলা অনুষ্ঠানে সুরাইয়া চিকিৎসকদেরই কোলে কোলে ছিল।
শিশুটির মা নাজমা খাতুন বলেন, ‘আমি কোনো দিন ভাবতে পারিনি বাবুটাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারব। সবাই আমার বাবুটারে ভালোবাসিছে। আপনারা দোয়া করবেন।’ তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। নাজমা বলেন, ‘আমার মা ছোটবেলায় মরি গেছে। তিনি (শেখ হাসিনা) মায়ের মতো আমাকে দেখিছেন।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, ‘সুরাইয়ার চোখে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এ জন্য তাকে ফলোআপে থাকতে হবে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, সুরাইয়া বড় হয়ে চিকিৎসক হওয়া পর্যন্ত সব দায়িত্ব সরকার নেবে।
বাড়ি ফিরল সুরাইয়া: মাগুরা প্রতিনিধি কবির হোসেন জানান, সুরাইয়াদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাগুরায় পৌঁছায়। খবর পেয়ে আগেই সুরাইয়াদের বাড়িতে হাজির হন জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান, পুলিশ সুপার এ কে এম এহ্সান উল্লাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম ও মাগুরা সদর হাসপাতালে সুরাইয়ার অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক মো. শফিউর রহমান। আশপাশের অনেক মানুষও এ সময় ভিড় করেন।
দীর্ঘ যাত্রার ধকলে ক্লান্তিতে নুয়ে পড়ছিল শিশু সুরাইয়া। বাড়িতে ঢোকার পরই বৃদ্ধ দাদি দুলালী বিবির কোলে তুলে দেওয়া হয় তাকে।
মা নাজমা খাতুন এ সময় বলেন, ‘দেশবাসী আমাগের জন্যি দোয়া করছে। তাগের জন্যি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই।’
সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভূঁইয়া বলেন, ‘সাংবাদিকরা পাশে না থাকলি কিছুই হতো না।’
জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান নাজমা খাতুনের হাতে ১০ হাজার টাকা তুলে দেন।
পুলিশ সুপার এহ্সান উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোয়ারপাড় এলাকায় আজিবরের বিকল্প কাউকে সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না।’
চিকিৎসক মো. শফিউর রহমান বলেন, ‘আমরা এখনো মা ও শিশুর সব রকম চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত আছি।’

No comments

Powered by Blogger.