শ্রীলঙ্কায় ঐক্যের পথে চার চ্যালেঞ্জ -দ্য হিন্দুর বিশ্লেষণ

মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, মাহিন্দা রাজাপক্ষে
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ঐক্যের ডাক দিয়েছে। তবে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের ক্ষত এখনো দগদগে থাকা একটি দেশে তা বাস্তবায়ন এতটা সহজ হবে না। অন্তত চারটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তাদের।
পুনর্মিত্রতা: সংখ্যালঘু তামিল বিদ্রোহীদের পৃথক রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা ২০০৯ সালে গুঁড়িয়ে দেয় সংখ্যাগুরু সিংহলি সম্প্রদায়ের নেতা প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের সরকার। সেই গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটলেও তা নিয়ে বিভাজন এখনো স্পষ্ট। রাজাপক্ষে সিংহলি ও তামিলদের মধ্যে বিদ্যমান ক্ষত শুকানোর সুযোগ করে দেননি। বরং জাতীয়তাবাদকে পুঁজি করে রাজনীতি করতে চেয়েছেন তিনি। তবে গত ৮ জানুয়ারির নির্বাচনে তাঁর হারের পর সম্পর্কোন্নয়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে। মাইথ্রিপালা সিরিসেনা প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পুনর্মিত্রতা দপ্তরও খোলা হয়েছে।
গত সোমবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিক্রমাসিংহের দল জয়ী হওয়ার পর ঐক্যের পথটা আরও মসৃণ হয়েছে। কারণ, এর মধ্য দিয়ে মার খেয়েছে রাজাপক্ষের বিভাজনের রাজনীতি। তবে এই নির্বাচন একটা জটিলতাও সৃষ্টি করেছে। নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা নিজের দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সকে (ইউপিএফএ) সমর্থন না দিয়ে বিরোধী দল ইউএনপিকে সমর্থন দিয়েছেন। এতে সংখ্যাগুরু সিংহলিদের মধ্যেও বিভাজন স্পষ্ট হয়েছে। সিরিসেনা-রাজাপক্ষে বিরোধ কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে। তবে একটা দিক থেকে এটা বড় উদ্বেগের কারণ। রাজাপক্ষে সিংহলিদের মধ্যে যে জাতীয়তাবাদের বীজ বুনেছেন, তা রাজনৈতিক সংস্কারের পথে মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
দুর্নীতি ও আইনের শাসন: রাজাপক্ষে আত্মীয়স্বজনদের সহায়তায় যে সরকারব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন, তা বর্ণনা করতে বিভিন্ন বিশেষণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘পক্ষপাতমূলক পুঁজিবাদ’, ‘মেগা-দুর্নীতি’, ‘পরিবারতন্ত্র’ ইত্যাদি। এসব দুঃশাসনের বেশির ভাগই যে এখনো রয়ে গেছে, তাতে সন্দেহ নেই।
রাজাপক্ষে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন বলে কথা উঠছে। সেটা ঘাঁটতে গেলে তাঁর অনুসারীরা নতুন সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারেন।
নিরাপত্তা খাতে সংস্কার: রাজাপক্ষে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সাধারণ শ্রীলঙ্কানরা সর্বপ্রথম যেসব সুবিধা প্রত্যক্ষ করে, তার একটি হলো ব্যক্তি স্বাধীনতার নতুন এক পরিবেশ। সিরিসেনা দায়িত্ব নিয়েই নিরাপত্তা বাহিনীর যে অংশটা জনগণের মধ্যে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে আসছিল, তার রাশ টেনে ধরেন। প্রশ্নাতীতভাবেই, আজ পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় সংস্কার। তবে দেশের সেনাবাহিনীর একটা অংশ আজও অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অন্যান্য শারীরিক হয়রানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অব্যাহত রেখেছে। সোমবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজাপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টাও মার খাওয়ায় এই সংস্কৃতির মূলোচ্ছেদ করার প্রচেষ্টায় গতি পাবে।
সাংবিধানিক সংস্কার: গত ছয় মাসে বড় সফলতার একটি হলো শ্রীলঙ্কার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী। নির্বাচনী প্রচারণাকালে সিরিসেনা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতাগুলো বিলোপ করার যে প্রতিশ্রুতি দেন, তা ওই সংশোধনীর মাধ্যমে পূর্ণতা পায়। ২০১০ সালে ওই নির্বাহী ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজাপক্ষে। এর বাইরে যে সংস্কার প্রস্তাবই পার্লামেন্টে তোলা হয়, তা আটকে দেন রাজাপক্ষের অনুগত এমপিরা। তবে সোমবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে। তাই সাংবিধানিক সংস্কারের কর্মসূচিগুলো এগিয়ে নিতে নতুন সরকারকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.