টানা পরিশ্রমে স্বাস্থ্যঝুঁকি

উন্নতির জন্য কঠোর পরিশ্রম জরুরি। কিন্তু কাজের মাঝে চাই নিয়মিত বিরতি। কারণ, টানা দীর্ঘ পরিশ্রম স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়। যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা বলছেন, সপ্তাহে অন্তত ৫৫ ঘণ্টা কাজ করলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) ঝুঁকি ৩৩ শতাংশ বাড়ে।
৫ লাখ ২৮ হাজার ৯০৮ জন নারী-পুরুষের ওপর গড়ে ৭ বছর ২ মাস ধরে পরিচালিত ১৭টি গবেষণা পর্যালোচনার ভিত্তিতে প্রভাবশালী চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট গতকাল বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, কর্মস্থলে নির্ধারিত সময়ের (নয়টা-পাঁচটা) বাইরেও যাঁরা অনেক সময় ধরে একটানা কাজ করেন, তাঁদের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তা ছাড়া সপ্তাহজুড়ে টানা দীর্ঘ পরিশ্রমের ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বাড়ে ১৩ শতাংশ।
গবেষণাপত্রগুলো বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনায় নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক মিকা কিভিমাকি। তিনি বলেন, সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করে অভ্যস্ত প্রতি হাজার কর্মজীবীর মধ্যে ১০ বছরে স্ট্রোকের ঘটনা পাঁচটির কম দেখা যায়। আর সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা আরও বেশি কাজে অভ্যস্ত প্রতি হাজার কর্মজীবীর মধ্যে এক দশকে স্ট্রোকের ঘটনা দেখা যায় অন্তত ছয়টি। তবে বেশি পরিশ্রম ও স্ট্রোকের মধ্যে যোগসূত্রের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা এখনো ‘প্রাথমিক পর্যায়ে’ রয়ে গেছে।
স্ট্রোক ও হৃদ্রোগের সাধারণ কারণগুলো জটিল। এসবের মধ্যে জিনগত এবং পরিবেশগত বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। তবে গবেষকদের মতে, শারীরিক পরিশ্রম না করা, মদ্য পান এবং বারবার মানসিক চাপের মধ্যে থাকার কারণে এসব রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ইউসিএলের ওই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন না—এ রকম কয়েকজন বিশেষজ্ঞও বলেছেন, বেশিক্ষণ কাজ করা এবং স্ট্রোক ও হৃদ্রোগের ঝুঁকির যোগসূত্র নিয়ে গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ। সুইডেনের ইউমা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক উরবন জনলিয়েট ল্যানসেটকে বলেন, অনেক বেশি সময় ধরে কাজ করার অভ্যাসটি অবহেলা করার মতো বিষয় নয়। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সপ্তাহে ৫০ ঘণ্টার বেশি কাজ করার হার তুরস্কে (৪৩ শতাংশ) সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম নেদারল্যান্ডসে (১ শতাংশের কম)। এএফপি ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.