সিরাজগঞ্জের সড়কে ঝরছে কেন প্রাণ? by ইমরান আহম্মেদ ও এনামুল হক

সিরাজগঞ্জে গত দুই মাসে ১৪টি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে এখন পর্যন্ত ৫৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২৫০ জন। গত ১৭ মে থেকে আজ রোববার পর্যন্ত প্রথম আলোর প্রিন্ট ও অনলাইন সংস্করণের খবর বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। জেলায় ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাণঘাতী ১৪টি দুর্ঘটনার মধ্যে বেশির ভাগই মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা।
বিগত দুই মাসের মধ্যে আজ সিরাজগঞ্জে সবচেয়ে বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের মূলিবাড়ি এলাকায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ১৬ জন নিহত  হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনার আহত প্রায় ৫০ যাত্রীর মধ্যে আটজনের অবস্থা গুরুতর। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে পারে।
বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মোজাম্মেল হকের তথ্য, বঙ্গবন্ধু সেতুটি দিয়ে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার লোকজন যাতায়াত করে। সেতুর টোল প্লাজার হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার গাড়ি সেতুটি ব্যবহার করে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, অদক্ষ চালক দিয়ে বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো হচ্ছে। অনেক অনভিজ্ঞ চালক দুই লেনের দ্বিমুখী মহাসড়কটিতে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালান। এ ছাড়া বেঁধে দেওয়া গতিসীমাকে অমান্য করে বেশি গতিতে গাড়ি চালায়। এ কারণে মহাসড়কের এ অংশে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে ছয় চালককে জরিমানা করা হয়েছে। দুর্ঘটনা কমাতে দ্রুত মহাসড়কটি চার লেন করে বিভাজন করা দরকার। এতে মুখোমুখি সংঘর্ষ অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, সিরাজগঞ্জে সড়কগুলোর অবস্থা ভালো নয়। এরপর এখানে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কটিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এর বড় কারণ এ সড়কটি দুইলেন ও দুই দিকের গাড়ি মুখোমুখি চলাচল করে।
আজকের মুলিবাড়তে দুই বাসের সংঘর্ষে আবুল কালামের দুই আত্মীয় মারা গেছে। তিনি করেন, এ সড়কটিকে গাড়ি চলাচলের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই গতিসীমা কোথাও ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, কোথাও ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। সড়কটিতে ওভারটেক বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো চালকই এসব নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। হরহামেশাই তাঁরা ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে গাড়ি চালান, ওভারটেক করেন। উভয়মুখে দুই লেনের সড়কগুলোতে কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
গত দুই মাসের মধ্যে গত ২৩ মে জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রাণহানির দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের কামারখন্দ উপজেলার সীমান্ত বাজার এলাকায় দুটি বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রাকের চালক, সহকারীসহ ১০ জন নিহত হন। দুর্ঘটনায় ৩০ জন আহত হন।
জেলায় ঘটে যাওয়া সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, মূলত তিনটি কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রথমত, কম ঘুমিয়ে, বিশ্রাম না নিয়ে বিরতিহীনভাবে চালকদের গাড়ি চালানো। দ্বিতীয়ত, গাড়ির অতিরিক্ত গতিবেগের পাশাপাশি দ্বিমুখী সড়কে ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করা। অর্থাৎ, ডান থেকে বামে বা বাম থেকে ডানে যাতায়াত। তৃতীয়ত, গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত এ সড়কটিতে মাত্র দুই লেন থাকা। দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এ মহাসড়কটির দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের মূলিবাড়ি এলাকায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে আজ রোববার ভোরে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৬ জন নিহত হয়েছে। আরও কমপক্ষে ৪৫ জন আহত হয়েছেন। ছবি: এনামুল হক, সিরাজগঞ্জ

No comments

Powered by Blogger.