পরাজয় মেনে মিলিব্যান্ড, ক্লেগ ফারাজের পদত্যাগ

মুহূর্তেই পাল্টে গেছে যুক্তরাজ্যের রাজনীতির দৃশ্যপট। নির্বাচনে ভয়াবহ ভরাডুবির দায় কাঁধে নিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন লেবার দলের প্রধান এড মিলিব্যান্ড, লিবারেল ডেমোক্রেট দলের প্রধান নিক ক্লেগ ও ডানপন্থি ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টির (ইউকিপ) প্রধান নাইজেল ফারাজ। হেরেছেন বহু রথী-মহারথী। তাই যুক্তরাজ্যের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কোনদিকে মোড় নেবে, তা নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। হতাশাজনক ফলাফলের পরই লেবার দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ও দলীয় প্রধান এড মিলিব্যান্ডের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ে। মিলিব্যান্ড দুপুর নাগাদ দলের কেন্দ্রীয় অফিসে যান। সেখানে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তার মুখে স্মিত হাসি থাকলেও তার আড়ালে লুকানো ছিল এক গোপন বেদনা। বৈঠক শেষে এক জনসভায় প্রকাশ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় মিলিব্যান্ড বলেন, সময় এসেছে দলের নেতৃত্ব অন্য কারো নেয়ার। দল সফল হয়নি, সেজন্য আমি সত্যিকার অর্থেই দুঃখিত। এড মিলিব্যান্ড নিজের আসন রক্ষা করতে পারলেও হেরে গে
দল থেকে পদত্যাগ করেছেন যুক্তরাজ্যের লিবারেল ডেমোক্রেট দলের প্রধান নিক ক্লেগ। যুক্তরাজ্যের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তার দলের এক রকম ভরাডুবির পর পদত্যাগ করলেন তিনি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৮টি আসন পেয়ে স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এসএনপি) কাছে বৃটেনের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের মর্যাদা হারিয়েছে তার দল। এ খবর দিয়েছে বিবিসি। দলের এমন ফলাফলের পর তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আবেগপূর্ণ বিদায়ী ভাষণ দেন সমর্থক ও কর্মীদের প্রতি। এমন ফলাফলকে তিনি আখ্যায়িত করেছেন, দল প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে বড় আঘাত হিসেবে। তিনি বলেন, আমি জানতাম, এ নির্বাচনটি হবে লিবারেল ডেমোক্রেটদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী কঠিন। কিন্তু ফলাফল স্পষ্টতই আমাদের আশঙ্কার চেয়েও মারাত্মক খারাপ। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের নির্বাচনে ৫৭টি আসন পায় লিবারেল ডেমোক্র্যাট। সেবার কোন দলই সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন না পাওয়ায় লিব-ডেম হয়ে উঠে সরকার গঠনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক। সেবার ‘কিংস মেকার’ নিক ক্লেগ হয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের উপ-প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এবার প্রত্যাশার চেয়েও খারাপ ফলাফল করে তার দল। গতবার জোটসঙ্গী কনজারভেটিভ পার্টি এবার সাহায্য ছাড়াই এককভাবে সরকার গঠনের পথে। এ সমস্ত কিছুর দায় নিচ্ছেন নিক ক্লেগ। নিজের ভাষণে তিনি বলেন, এটা দেখাটা খুবই কষ্টকর যে, আমার বহু বন্ধু ও সহকর্মী হেরেছে। সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। অথচ তারা বহুদিন ধরে নিজেদের আসনে দায়িত্ব পালন করেছে। আমি অবশ্যই সবকিছুর জন্য দায় নেব। সেজন্য আমি ঘোষণা করছি, লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের নেতা হিসেবে আমি পদত্যাগ করতে যাচ্ছি। তবে এ-ও বলেছেন, ভয় ও অভিযোগের জয় হয়েছে, হেরে গেছে লিবারেলিজম। লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের প্রতি যে রায়ই ভোটাররা দিক, যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সংকটের সময় দলটির ভূমিকা ইতিহাসে লেখা থাকবে। পদত্যাগের আগে ক্লেগ এ-ও জানিয়ে গেছেন যে, তার দল ফিরে আসবেই। আবার জয় পাবেই।
পদত্যাগ করেছেন ইউকিপ দলের প্রধান নাইজেল ফারাজ। তার দলের ভোট এবার বেড়েছে। এবার দলটি পেয়েছে যুক্তরাজ্যের মোট ভোটের ১৩ শতাংশেরও বেশি ভোট। কিন্তু নাইজেল ফারাজ নিজের আসনে হেরে গেছেন কনজারভেটিভ দলের ক্রেইগ ম্যাকিনলের কাছে। তার দল পেয়েছে সাকুল্যে একটি আসন। তবে পদত্যাগ করলেও তিনি জানিয়েছেন আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় দলের নেতা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি তিনি ভেবে দেখবেন।
ছেন তার দলের অনেক রথী-মহারথী। ছায়া চ্যান্সেলর এড বলস এর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচার প্রধান ডগলাস আলেক্সান্দার হেরেছেন স্কটল্যান্ডের স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এসএনপি) ২০ বছর বয়সী প্রার্থী মাইরি ব্লাকের কাছে। স্কটিশ লেবার পার্টির প্রধান জিম মারফিও দেখেছেন হারের মুখ। দলের বাজে ফলাফলের পরও দলীয় সদর দপ্তরে পৌঁছালে উষ্ণ সংবর্ধনাই পান মিলিব্যান্ড। নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, উপ-প্রধান হারিয়েত হারম্যান হবেন দলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান। এক ভাষণে তিনি বলেন, আমি লেবার দলে যোগ দিয়েছি মাত্র ১৭ বছর বয়সে। কখনও ভাবিনি দলটিকে নেতৃত্ব দেব। আমি গত পাঁচ বছরে আমার সর্বোচ্চ করেছি। তবে তার মতে, নেতৃত্বই পরিবর্তন অর্জনের জন্য একমাত্র নিয়ামক নয়। এর আগে টুইটার বার্তায় কর্মীদের উদ্দেশ্যে মিলিব্যান্ড বলেন, যারা আমার প্রচারে আত্মনিয়োগ করেছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। তবে ফলাফলের পুরো দায় আমার একার। আবার জানিয়েছেন, তার দল লেবার কখনই দেশের কর্মজীবী মানুষদের পক্ষে লড়াই থামাবে না। বৃটেনের পক্ষে যা কিছু তিনি ভাল বলে বিশ্বাস করেন, তার পক্ষে লড়াই অব্যাহত রাখবেন। ফলাফলের রাতটিকে তিনি আখ্যায়িত করেছেন ‘খুবই হতাশাজনক ও কঠিন’ একটি রাত হিসেবে। ২০১০ সালে যেখানে ২৫৮টি আসন পেয়েছিল লেবার, এবার তারা পেয়েছে ২৩৪টি আসন। তবে ইংল্যান্ড বা ওয়েলসে ভাল করলেও স্কটল্যান্ডেই লেবাররা ডুবেছে। সেখানে গতবছর ৪১টি আসন পেলেও এবার লেবাররা পেয়েছে মাত্র ১টি আসন। এ কথাটিও ছিল মিলিব্যান্ডের ভাষণে। বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদীদের উত্থানেই নিমজ্জিত হয়েছে লেবার পার্টি।

No comments

Powered by Blogger.