আন্দোলনের নামে যারা পুড়িয়ে মারে, মানুষ তাদের ভোট দেয় কিভাবে by লুৎফর রহমান, ইসরাইল হোসেন বাবু ও সাগর বসাক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা আন্দোলনের নামে পুড়িয়ে হত্যা করে মানুষ তাদের কিভাবে ভোট দেয়? কিছু লোক কিভাবে তাদের সঙ্গে থাকে? কিভাবে তাদের দল করে? গতকাল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোন অনাচার-অবিচারকে কিন্তু তিনি মেনে নেননি। তার যে মূল দর্শন সেখানে আমরা গণতান্ত্রিক চিন্তাধারা দেখতে পাই, অর্থনীতি ও সমাজ নিয়ে চিন্তাভানা পাই। সুবিচার, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে তিনি এক বিশ্বের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি, বিভাজনের বিরুদ্ধে ঐক্য এবং ধ্বংসের বিপরীতে তিনি চিরদিনই সৃষ্টির গান গেয়ে গেছেন। ১৯১৯ সালে যখন জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ড ঘটে, তখন তিনি এর প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনি শুধু প্রতিবাদই করেননি। এ ঘটনার পর তিনি বৃটিশ সরকারের দেয়া নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের মধ্যে এই প্রতিবাদের গুণ ছিল। কিন্তু আমাদের মধ্যে তা অনেক সময় দেখা যায় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুষ্টিয়ায়ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ করা হবে। এ ভবনের নকশাও করা হয়েছে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে সমাবেশে স্মারক বক্তৃতা করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আকতারি মমতাজ ও জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে গতকাল শাহজাদপুরে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে সেজেছিল বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত ছোট এ শহর। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে আশপাশের উপজেলা থেকেও দলীয় নেতাকর্মীরা অংশ নেন। সকালে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে শাহজাদপুর আসেন। এরপর তিনি সরাসরি শাহজাদপুর মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত সমাবেশ মঞ্চে যান। মূলত সেটি সুধী সমাবেশ হলেও তা জনসভায় পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ও ২২৫ মেগাওয়াট সার্কেল ইউনিট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তরসহ ১৫০ গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিরাজগঞ্জের মুলীবাড়িতে নির্মিত মেরিন একাডেমি, সিরাজগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস, সিরাজগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রি অফিস এবং সিরাজগঞ্জ শেখ রাসেল পার্কের উদ্বোধন করেন।
শাহজাদপুর উপজেলা সদরের অদূরে পোতাজিয়া ইউনিয়নের রামকান্তপুর এলাকায় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ক্যাম্পাস হবে। অনুষ্ঠানস্থলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা, শিল্প, সাহিত্যসহ সব ধরনের শিক্ষাই দেয়া হবে। তিনি বলেন, মানুষের উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। এজন্য দেশের জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা চাই না বাংলাদেশ উল্টো দিকে চলুক।
তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের সব মানুষের নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে, সব শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করতে। জাতির পিতা সব সময় এ স্বপ্ন দেখতেন। আমরা দেশকে সেভাবেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতীয় সংগীত তার লেখা। তিনি ভারতবর্ষেরও জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন। তার অধিকাংশ রচনায়ই বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতি সম্পৃক্ত। তিনি একেবারে শেষ বয়সে এসে সোনার তরী কাব্যের ভূমিকায় এ বিষয় উল্লেখ করেছিলেন।
এখন যে ক্ষুদ্রঋণের প্রচলন হয়েছে এ ক্ষুদ্রঋণ রবীন্দ্রনাথ সে সময়েই চালু করেছিলেন। তিনি দেখিয়ে গেছেন কিভাবে কৃষকের উন্নয়ন করতে হয়। তিনি যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তার অর্থও কৃষকের সুবিধার্থে ক্ষুদ্রঋণে বিনিয়োগ করেছিলেন। তিনি নিজের ছেলেকে কৃষিবিষয়ক শিক্ষার জন্য আমেরিকা পাঠিয়েছিলেন। শাহজাদপুরের জমিদার হিসেবে তিনি সাড়ে চার হাজার বিঘা জমি গোচারণ ভূমি হিসেবে দিয়েছিলেন। এর ওপর ভিত্তি করেই এখানে দুগ্ধ শিল্প গড়ে ওঠে। এ শিল্প বিকাশে আমরা আরও উদ্যোগ নেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে গেছেন আর বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীন সত্তা দিয়ে গেছেন, স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। যার জন্য আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি।
শিক্ষার ওপর সরকার গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। শিক্ষা বিস্তারে সহায়তার জন্য শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। প্রত্যেক উপজেলা হাসপাতালকে ৫০ এবং জেলা সদরের হাসপাতালকে ৩৫০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। মাতৃ মৃত্যুর হার কমেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ এলাকার মানুষের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় আছেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি এ দেশের মানুষের কল্যাণে সব করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশে পরিণত করতে শেখ হাসিনাকে সময় দিতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রীও অতিথি সারিতে বসে কিছুক্ষণ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এ সময় রবীন্দ্রনাথের দুটি চিঠি পড়ে শোনান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার

No comments

Powered by Blogger.