এ কেমন বর্বরতা!

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
চিকিৎ​সাধীন শিমু আক্তার l ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেয়েটি। ভেঙে যাওয়া দুই পায়েই গোড়ালি থেকে প্লাস্টার করা। নাকে নল। মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমে আছে।
গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে এ দৃশ্য দেখা গেল। চিকিৎসাধীন মেয়েটির নাম শিমু আক্তার (১৬)। তার অভিযোগ, বাড়ির মালিকের মেহেদিগাছ থেকে সে পাতা ছিঁড়তে গেলে ফুল গাছের একটি ডাল ভেঙে যায়। এ কারণে সে বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বাড়িওয়ািল তাকে মারধর করে তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দিয়েছেন।
শিমু রাজধানীর ভাষানটেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শহীদ বদিউজ্জামান সড়কের অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা কর্মকর্তার বাড়ির ভাড়াটে মিজানুর রহমানের গৃহকর্মী। গত শনিবারের এ ঘটনায় ভাষানটেক থানায় বাড়ির মালিকের স্ত্রী আয়শা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ঘটনার পর থেকে আয়শা বেগম পলাতক।
মামলার সূত্র ও শিমুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাড়ি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কয়রা গ্রামে। ছোটবেলায় মাকে হারায়। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। বছর দুয়েক ধরে সে মিজানুর রহমানের গৃহকর্মী। তাঁর বাড়িও কয়রা গ্রামে।
শিমু কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলে, ‘গৃহকর্ত্রী আদর করেন। কিন্তু বাড়িওয়ািল (আয়শা বেগম) কারণে-অকারণে আমাকে বকতেন। শনিবার দুপুরের আগে বাড়ির উঠান থেকে আমি মেহেদি পাতা আনতে গেলে টবের ফুলগাছের একটি ডাল ভেঙে যায়। তা দেখে বাড়িওয়ািল আমাকে বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে মারধর করেন। পরে রাতে আমাকে ডেকে ছাদে নিয়ে বলেন, তোর সঙ্গে কথা আছে। এরপর আমাকে মারতে থাকেন। আমি তাঁকে খামচি দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাকে মারতে মারতে ছাদ থেকে ফেলে দেন।’
মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার স্ত্রী গ্রামে গেছেন। শনিবার আমি অফিস থেকে ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বাড়িওয়ািল শিমুকে ডেকে পাঠান। তখন আমার মা শিমুকে বলেন, যদি ডেকে থাকে তাহলে শুনে আয়। এর কিছুক্ষণ পর বাড়ির দারোয়ানসহ কয়েকজনের চিৎকার শুনে নিচে গিয়ে দেখি শিমু পড়ে আছে। অচেতন অবস্থায় তাকে কচুখেতের হাইটেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসকেরা অবস্থা গুরুতর বলে ঢাকা মেডিকেলে নিতে বলেন। রাতেই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করি।’
শিমু ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। সেখানকার চিকিৎসক আশরাফউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েটির শরীরের অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাকে ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার দুই পায়ের গোড়ালি ভেঙে গেছে, মেরুদণ্ডের একটি হাড় সরে গেছে। পেটের ভেতর রক্ত জমে আছে। এমন অবস্থায় চাইলেও অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। আমরা মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
ঘটনার পর থেকে আয়শা বেগম বাড়িতে নেই। যোগাযোগ করা হলে তাঁর স্বামী মেজর (অব.) আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ওই বাড়িতে থাকি না। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। ঘটনাস্থলে গেলেই আপনারা সব জানতে পারবেন।’
ভাষানটেক থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। তদন্ত হচ্ছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু করব।’

No comments

Powered by Blogger.